ভয়টাই সত্য হলো

যে ভয় পেয়ে পালাতে চেয়েছিলেন ঢাকা থেকে। সেই ভয়টাই সত্য হলো তার জীবনে। নিয়ে এলো করুণ পরিণতি। এখন চরম এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতদরিদ্র রিকশাচালক অমূল্য চন্দ্র বর্মণ (৪৫)। নিজের জীবনকে মূল্যহীন ভাবা ছাড়া আর কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। আর কি পারবেন আগের জীবনে ফিরে যেতে? দ্বগ্ধ শরীর নিয়ে সেই দুর্ভাবনাই তার মনকে আরও বিধ্বস্ত করছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অমূল্য অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বারবার কাঁদছেন। এখন তার যে অবস্থা, হয়তো ছেলে রতন বর্মণের এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হবে না। কোন রকম এ পর্যন্ত টেনে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন তিনি। এখন আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে ছেলের বড় হওয়ার স্বপ্নটাও যে বিসর্জন দিতে হবে বাবার দুর্ভাগ্যবরণের সঙ্গে সঙ্গে।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ। তাই ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে চেয়েছিলেন তারা ৭ জন। পেশায় রিকশাচালক। সবার গন্তব্য পঞ্চগড়। তাদেরই একজন অমূল্য বর্মণ। সূর্যের আলো ফোটার আগে ঢাকা থেকে বের হওয়াটা নিরাপদ মনে করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে গতকাল ভোরে গাবতলীর উদ্দেশে বের হন তারা। লোকাল বাসে কাওরান বাজারে এসে পৌঁছালে বাইরে থেকে ছুড়ে মারা হয় পেট্রল বোমা। এতে ঘটনাস্থলে দগ্ধ হন অমূল্য। আগুন ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। তার অপর সহযাত্রী অনীল চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমরা পেছনে বসা ছিলাম। অমূল্য ছিলেন জানালার পাশে। কাওরান বাজারে এসে বাস থামলে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে দু’জন এসে পেট্রল বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় আগুন লাগলে অমূল্যসহ আরও একজন দগ্ধ হন। তিনি ৩ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। ৩ ছেলে ও স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের কাদেরপুরে। তদের কাছেই যেতে চেয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। মুখের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে।
এদিকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মগবাজারে দগ্ধ হন ব্যক্তিগত কারচালক আবুল কালাম (২৪)। মগবাজার মোড়ের পাশে গাড়ি বন্ধ করে চালকের সিটে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। এসেছিলেন মালিকের এক স্বজনকে নিয়ে তার আত্মীয়ের বিয়েতে। বসে থাকতে থাকতে তার তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে তার কাচের গ্লাস ভেঙে ভেতরে পেট্রল বোমা ছুড়ে মারে। এ সময় তারা পালিয়ে গেলেও বের হতে পারেননি তিনি। দগ্ধ হন আগুনে। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করলেও ততক্ষণে শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গেছে। আবুল কালামের গ্রামের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝড়ার রামতায়। ৭ বছর ধরে তিনি ঢাকায় আছেন এবং একই মালিকের গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ঢাকায় কলাবাগানে গাড়ির মালিকের বাসায় থাকতেন তিনি। মালিক দৈনিক যায়যায়দিনের সাংবাদিক। তার শরীরের ৩৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। মুখ ফুলে বিকৃত হয়ে গেছে। পা ও হাতের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসকরা জানান, তিনি নিরাপদ নন।
রাত সাড়ে ১০টায় মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও দু’জন। তারা হলেন কামরাঙ্গীরচরের আল হোসাইনিয়া জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন আবদুল গফুর (৩৫) ও খাদেম মিজানুর রহমান (৩০)। নবীনগর থেকে সোহান পরিবহনে কামরাঙ্গীরচরে ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে। নামার কিছুক্ষণ আগে যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা পেট্রল ডেলে আগুন দেয়। এতে তারা দগ্ধ হন।

No comments

Powered by Blogger.