রাঙামাটিতে সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি

(রাঙামাটিতে গতকাল পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হলে পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়l ছবি: প্রথম আলো) রাঙামাটিতে গতকাল শনিবার সকালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৩১ জন আহত হয়েছেন। পরে এ সংঘর্ষ পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতায় রূপ নিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌরসভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসন সাড়ে ১১টার দিকে ১৪৪ ধারা জারি করে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।
জেলা প্রশাসক মো. শামসুল আরেফিন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হবে।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটিতে গতকাল সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দিয়েছিল। ছাত্র পরিষদসহ আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আগে রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে আসছিল।
অন্যদিকে ছাত্রলীগসহ স্থানীয় বাঙালিদের কয়েকটি সংগঠন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল।
গতকাল ভোর ছয়টা থেকে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, যুব সমিতি, মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতা-কর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা যায়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে কালিন্দীপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ওসি সোহেল ইমতিয়াজ আহত হন। পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ এসে ছাত্র পরিষদের কর্মীদের কালিন্দীপুর সড়কমুখের দিকে এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের হ্যাপির মোড়ের দিকে সরিয়ে দেয়। এ সময় ছাত্র পরিষদের কর্মীরা ইসলামী ব্যাংক ও কয়েকটি দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। আর ছাত্রলীগের কর্মীরা আদিবাসীদের মালিকানাধীন শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও টেলিটক কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে ভাঙচুর করেন।
পরে বেলা ১১টার দিকে বাঙালিরা জড়ো হয়ে বনরূপার কাছে আদিবাসী গ্রাম দেওয়ানপাড়া ও ট্রাইবাল আদামে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশসহ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে সাড়ে ১১টার দিকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
শহরের তবলছড়ির আনন্দ বিহার এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে একদল বাঙালি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পিকেটারদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কর্মীরা বৌদ্ধমন্দির আনন্দ বিহার চত্বরে প্রবেশ করলে বাঙালিরা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাঙামাটি সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর্যপ্রিয় চাকমা ও মিন্টু চাকমা নিজেদের বাসায় যাওয়ার সময় চম্পকনগর সড়কে একদল বাঙালির লাঠিসোঁটার আঘাতে গুরুতর আহত হন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ ইমরান রোকন অভিযোগ করেন, তাঁদের নেতা-কর্মীরা মেডিকেল কলেজ উদ্বোধন দেখতে যাওয়ার পথে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কর্মীরা হামলা চালান। তবে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বাচ্চু চাকমা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ছাত্রলীগের কর্মীরাই তাঁদের ওপর হামলা চালান।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে মো. হারুন, জামাল হোসেন, বীথি চাকমা, জাকির হোসেন, মো. মানিক, জহিরুল আলম, জব্বার হোসেন, মো. মনির ও জীবন্ত তঞ্চঙ্গ্যাকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে অবস্থার অবনতি হলে বীথি চাকমা ও জাকিরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে এসএ টিভির প্রতিনিধি মো. সোলায়মান অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা তাঁকে এবং ইয়াছিন রানা ও আনোয়ার হোসেন নামের আরও দুই সাংবাদিককে মারধর করেন এবং দুটি ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যান।

No comments

Powered by Blogger.