ফ্রান্সে মুসলিমরা কোণঠাসা

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন চার্লি হেবদোর অফিসে বুধবার হামলার পর দেশটির বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি মসজিদে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ইউরোনিউজসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এ খবর জানায়। প্যারিসের পশ্চিমে লে মেনসের কাছে একটি মসজিদে কয়েকটি গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া মসজিদে বুলেটের চিহ্নও দেখা গেছে। দক্ষিণ ফ্রান্সের পোর্ট লা নৌভেলে জেলায় একটি মসজিদ লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। মাগরিবের নামাজের পর ওই হামলার ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। হোনা অঞ্চলের একটি শহরে এক মসজিদের কাছে রেস্টুরেন্টেও বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। লে পোগহে পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে সিনহুয়া জানায়, এ বিস্ফোরণে জানালার কাচ ভেঙে যায়। এসব ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যায়িত করেছেন দেশটির প্রসিকিউটর। এর আগে অভিযানের তৃতীয় দিনে শুক্রবার প্যারিসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দ্রুতগতির একটি গাড়িকে ধাওয়া করে পুলিশ। মহাসড়কে দুই ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের গুলির ঘটনা ঘটেছে। প্রসিকিউটরের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রতিবেদনে বলেছে, শুক্রবার গুলিতে কেউ নিহত হয়নি। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, ওই ব্যক্তিরা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন চার্লি হেবদোর অফিসে ১২ জনকে হত্যা ও আহতের জন্য সন্দেহভাজন হতে পারেন। হেবদো পত্রিকা অফিসে বুধবার কালাশনিকভ রাইফেল ও রকেট লঞ্চার নিয়ে হামলা চালায় তিন ব্যক্তি। এতে পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক ও তিন ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী এবং পুলিশ সদস্যসহ ১২ জন নিহত হন। আহত হন আরও ১০ জন। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। এ হামলার মূল হোতাদের মধ্যে সাইদ কৌচি ও চিরেফ কৌচি অন্যতম।
ফ্রান্সে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে একে। হামলাকারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় আরও হামলার আশংকা করা হচ্ছে। দু’ভাইয়ের এক ভাই আল কায়দার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফ্রান্সের প্যারিসে রম্য সাপ্তাহিক পত্রিকা শার্লি হেবদোর কার্যালয়ে হামলাকারী দুই ভাইয়ের একজন আল কায়দার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হামলাকারীদের একজন সাঈদ কোউয়াচি ইয়েমেনে আল কায়দার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। তিনি জানান, ৩৪ বছর বয়েসী কোউয়াচি ২০১১ সালে ইয়েমেনে আল কায়দার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এর আগে প্যারিসের উত্তরাঞ্চলীয় একটি বনে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসেন এ দুই ভাই। ৭ জানুয়ারি সকালে ফ্রান্সের প্যারিসে ব্যঙ্গ পত্রিকা শার্লি হেবদোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে এরপর প্রধান সম্পাদকসহ আটজন কার্টুনিস্ট, দুজন পুলিশ সদস্য ও অন্য দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকধারীরা। এর প্রতিবাদে সমগ্র দেশবাসী গর্জে ওঠেন। সেই সঙ্গে বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলিও এ হত্যার নিন্দা জানিয়ে শার্লি হেবদোর নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এএফপির খবরে জানানো হয়, সন্দেহভাজন হামলাকারী সাঈদ (৩৪) এক বছর ধরে সন্ত্রাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি তালিকায় রয়েছেন। ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে সাঈদ ইয়েমেনে যান। সেখানে তিনি আল কায়দার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন।
বড় হামলার ছক করছে আল কায়দা : ব্রিটেন
ব্রিটেনসহ পশ্চিমাবিশ্বে ফের বড় ধরনের হামলা ছক কষছে জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা। ব্রিটিশ গোয়েন্দা দফতর আল কায়দার সম্ভাব্য হামলার ছক মাথা রেখে ব্রিটেনজুড়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। ব্রিটেন সিকিউরিটি সার্ভিসের পরিচালক অ্যান্ড্র– পার্কার জানিয়েছেন, আল কায়দার হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে ব্রিটেনজুড়ে রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসের এক গোয়েন্দা দলকে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সিরিয়াভিত্তিক আল কায়দা জঙ্গিরা ব্রিটেনের বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তারা বড় ধরনের প্রাণহানির পরিকল্পনা করছে। বিশেষত পাবলিক প্লেস কিংবা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালাতে চায় জঙ্গিরা। তিনি জানান, এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত জঙ্গি মুহসিন আল আল ফাদলি এই হামলার নেতৃত্ব দিতে পারেন। যে কোনো ধরনের বোমা তৈরিতে সক্ষম এই আল কায়দা জঙ্গির মাথার দাম ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেনের সম্ভাব্য আল কায়দা হামলার বিষয়ে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, এ ধরনের হামলার আশংকায় দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দ্য টেলিগ্রাফ, ডেইলি মেইল।

No comments

Powered by Blogger.