সমঝোতা চায় সাধারণ মানুষ by উৎপল রায়

অবরোধে বিপর্যস্ত জনজীবন। একদিকে সহিংসতা, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই জোটের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান চান তারা। রাজধানীর তিতুমীর কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সম্মান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সবুজ মুন্সি। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে বীতশ্রদ্ধ এ তরুণ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চায় বিএনপিকে দমন করতে। বিএনপি চায় আওয়ামী লীগকে দমন করতে। জনগণ হয়ে গেছে ফুটবল। রাজনীতিবিদরা হচ্ছে খেলোয়াড়। এ থেকে যেন নিস্তার নেই। তিনি বলেন, দিনের পর দিন দেশজুড়ে অচলাবস্থা চলছে। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কে দেখবে? সাধারণ মানুষ নিয়েই তো তাদের রাজনীতি। অন্তত সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে হলেও দুই নেত্রী সমঝোতায় আসুক। গুলিস্তান জিপিওর প্রধান শাখায় কর্মরত কাকলি সরকার। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় দলকেই নমনীয় হতে হবে। আরও সহনশীল হতে হবে। বিশেষ করে সরকারকে যেমন দায়িত্বশীল হতে হবে, তেমনি বিএনপিকেও ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের চা দোকানদার সুজন মিয়াও রাজনীতি নিয়ে ভাবেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শঙ্কিত খেটে খাওয়া এ মানুষটি। নিকট বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সে আশা নেই তার। তিনি বলেন, দু’দলের কেওয়াজে জনগণের অবস্থা খুবই খারাপ। অবরোধ শুরু হইছে পর থেইক্কা দোকান খুলছি হাতেগোনা কয়দিন। এর মধ্যে আবার সন্ধ্যা হইতে রাস্তাঘাটে মানুষ থাকে না। চা খাওয়ার লোক নাই। এমুন চললে পরিবার চলবো কি কইরা? সুজন বলেন, দু’দল একজন আরেকজনকে ছাড়ে না। সামনের দিনগুলা ভাল হইবো সেই আশাও দেখি না। ফার্মগেটের পত্রিকা বিক্রেতা সুমন বলেন, রাজনীতিবিদরা নিজেরটা ভাল বোঝে। কিন্তু জনগণেরটা বোঝে না। দিনে-রাইতে ঘর থেইক্কা বাইর হইতে ভয় লাগে। কখন কি হয়। পুরানা পল্টনের ফুটপাথের বই বিক্রেতা সুমন বলেন, দেশের পরিস্থিতি ভাল না। ক্ষতি হইতাছে সাধারণ মাইনষের। কিন্তু আমরা তো কোন দোষ করি নাই। নিজের কামাই নিজে খাই। রাজনীতি বুঝি না। হেরপরও ভোগান্তি আমাগোর। সাধারণ মাইনষের কথা চিন্তা কইরা দুই নেত্রী নিজেগো মইধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে পারে না? বায়তুল মোকাররম মার্কেটের উর্মি জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী পলাশ বলেন, রাজনীতির নামে যা হচ্ছে তা কারও কাম্য নয়। এ রাজনীতি কোন রাজনৈতিক সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। পেট্রলবোমা মেরে মানুষ মারছে। কেউ কেউ গুলি করার কথা বলছে। আবার একদল আরেক দলকে দুষছে। অবরোধের নামে দেশ অচল করে দেয়া হচ্ছে। ব্যবসার কোন ভবিষ্যৎ নেই। সারা দিনে কোন লেনদেন নেই। রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, সরকার ধরপাকড়, গুলি বন্ধ করুক। একটু সহনশীল হোক। আর বিএনপি একটু নমনীয় হয়ে ছাড় দিয়ে আলাপ-আলোচনায় বসুক। এতে হয়তো দু’দলের সামান্য ক্ষতি হবে। কিন্তু এ ক্ষতি দেশবাসীর বর্তমান ক্ষতির কাছে কিছুই নয়। গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এলাকায় কথা হয় রিকশাওয়ালা মো. আনিসের সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, নেতারা কি সাধারণ মাইনষের কথা চিন্তা করে? যদি তারা আমগর কথা চিন্তা করতো তাইলে কি আর দেশের পরিস্থিতি এইরহম থাকে। তিনি বলেন, পেটের দায়ে জানডারে হাতে কইরা রিকশা নিয়া বাইর হইছি। আবার সন্ধ্যা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবো। ভয় লাগে কখন কি ঘটনা ঘটে। বেসরকারি সিটি ইউনিভার্সিটির বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী শিমুল বলেন, কি এক অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে যে আছি! বাসে যখন যাই জানালা বন্ধ করে যাই। যত কাজই থাক সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় বাসায় ফিরি। এ থেকেই বোঝা যায় দেশে বর্তমানে কি অবস্থা বিরাজ করছে।

No comments

Powered by Blogger.