অবরোধের মধ্যে আবার হরতাল দেওয়ার চিন্তা by সেলিম জাহিদ

চলতি সপ্তাহটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে বিএনপি। তাই চলমান অবরোধ কর্মসূচিকে জোরদার করতে সারা দেশে আবারও হরতাল দেওয়ার চিন্তা করছে দলটি। এরপর অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হতে পারে বলে বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী এক সপ্তাহ রাজপথে থেকে কঠোরভাবে কর্মসূচি পালন করার জন্য ইতিমধ্যে বিএনপি ও জোটের শরিক দলের নেতা-কর্মীদের বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কে অবরোধ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানার নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি আগামী সপ্তাহটি কেন গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে, তা জানা যায়নি। যদিও কয়েক দিন ধরে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, অবরোধ কর্মসূচি চলছে। এর সঙ্গে কয়েক দফা হরতালও পালিত হয়েছে। প্রয়োজন হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার হরতালের ডাক দিতে পারেন। তবে রবি-সোমবার হরতাল ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানান তিনি। এদিকে কাল রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তিন দিনের সফরে ভারত আসছেন। এ সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ওবামার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি অতীতের মতোই বিদেশের দিকে তাকিয়ে আছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের ধারণা, বস্তুত ওবামা-মোদি বৈঠকের পর দেশের চলমান সংকটের সমাধান কোন পথে হবে অথবা দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে—তার একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত সফরে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিয়ে নিশ্চয়ই আলোচনা হবে। আর বাংলাদেশের বিষয়ে আমেরিকা ও ভারত দুই দেশেরই উৎসাহ আছে। সে কারণে ওবামা-মোদি বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাকা স্বাভাবিক। আর তাঁরা যদি বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একমত হন, তাহলে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টানা ১৮ দিনের অবরোধের পর এ মুহূর্তে আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো সময় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটতে পারে। এ অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি বিএনপিও আন্তর্জাতিক মহলে তৎপরতা বাড়িয়েছে। দলের কূটনৈতিক শাখার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম ওসমান ফারুক যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার আরেক প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সরকার ও ক্ষমতাসীন দল বিজিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা।
বিএনপির কাছে তথ্য আছে, সরকার আন্দোলন বানচাল করতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করাসহ সারা দেশে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে বড় ধরনের সাঁড়াশি অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফরের শেষ না দেখে এ অভিযান শুরু করছে না। সরকারও মনে করছে, এ অঞ্চলে রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি কী হবে, তা এ সফরে স্পষ্ট হতে পারে। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের মনোভাব আরও স্পষ্ট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.