সঙ্কট নিরসন করতে না পারলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিসা কার্টিজ বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের লক্ষ্যে সরকার ও বিরোধী দলকে সংলাপে বসার পরামর্শ দেন। ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা কিভাবে মূল্যায়ন করেন- এমন প্রশ্নে লিসা কার্টিজ বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংঘাত এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের অবরোধ গত বছর নির্বাচনের আগে যেমনটি ঘটেছিল তারই পুনরাবৃত্তি। লিসা কার্টিজ বলেন, ‘মূলত এ অবস্থার জন্য দায়ী গত বছরের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন, যা অনুষ্ঠিত হয় বিরোধী রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া। এখন বিরোধী দল অবরোধ ডেকেছে, সহিংস-বিক্ষোভ করছে আর সরকার হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী আটক করছে।’ অবিলম্বে বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কট নিরসন করতে না পারলে এর পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে, এমনকি জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেন লিসা কার্টিজ।
তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ভয়ানক পরিস্থিতি এবং এর কারণে এখন ইসলামপন্থি জঙ্গিরা বর্তমান অবস্থার সুযোগ নিতে পারে। আল কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি গত বছর বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ফলে আল কায়েদার মতো জঙ্গি দল বা অপরাপর ইসলামপন্থি জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিতে পারে। এটি অত্যন্ত মারাত্মক পরিস্থিতি।’
এ সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসার উপায় কি- এ প্রশ্নে তিনি বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করার পরামর্শ এবং সরকারের প্রতি গ্রেপ্তারকৃত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়ার পরামর্শ দেন।
লিসা বলেন, ‘প্রথমত বুঝতে হবে যে ওই ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দল অসন্তুষ্ট। তবে সরকারের কাছে তাদের দাবি জানানোর পন্থা হিসেবে বিরোধী দলের এ অবরোধ কর্মসূচি সঠিক পন্থা নয়। দাবি আদায়ের জন্য তাদের অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে। আর এ অবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে অবিলম্বের বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা উচিত এবং দ্বিতীয়ত, সরকারের উচিত গ্রেপ্তারকৃত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া। এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সরকার ও বিরোধী দলকে সংলাপে বসতে হবে এবং সরকারকে অবশ্যই বিরোধী দলের দাবি স্বীকার করতে হবে।’
তিনি সরকারকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিবেচনা করারও পরামর্শ দেন।
লিসা বলেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মুসলিম গণতান্ত্রিক অংশীদার, কিন্তু এখন এমন অবস্থা যে দেশটিতে একদলীয় শাসন চলছে এবং আমার মতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বিবেচনা করা উচিত এবং এমন একটা পথ খোঁজা উচিত যেখানে বিরোধী দল তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। আপনি গণতন্ত্রের নাম দিয়ে একদলীয় শাসন বজায় রাখতে পারেন না।’
সঙ্কট নিরসনে তিনি বন্ধুপ্রতিম বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে পরামর্শ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাল অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, সম্পর্ক রয়েছে জাপানের সঙ্গে এবং অন্য ইউরোপীয়ন দেশগুলোর সঙ্গেও। তারা কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত বিবেচনার পরামর্শ দিতে পারেন।’
তবে লিসা কার্টিজ মনে করেন, চীন ও ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কট নিরসনে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা চীন ও ভারতের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তেমন সহযোগিতা আসবে না। ভারত বিশ্বাস করে সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থরক্ষার্থে ভাল সহযোগী। ফলে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা করতে ভারত শেখ হাসিনাকে চাপ দেবে তা মনে হয় না। তাই বর্তমান অবস্থা নিরসনের চেষ্টা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও কিছু ইউরোপিয়ান দেশ তাদের কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে পারে।’

No comments

Powered by Blogger.