বিদেশী বিনিয়োগকারীরা মুখ ঘোরাতে পারেন -হেনরিক মেইহ্যাক

গতকাল জার্মান বেতার ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ঢাকায় অবস্থানরত ফ্রেডরিক এবার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক হেনরিক মেইহ্যাক বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের ফলে বাংলাদেশী পোশাক  ক্রেতা ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর যদি শিগগিরই রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব হয়, তাহলে দেশটির পক্ষে এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে।
ডয়েচে ভেলে: বেশ কিছুটা সময় ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক গোলযোগ চলছে। এটি দেশটির জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে কতটা প্রভাব ফেলছে?
হেনরিক: বাংলাদেশের মানুষ এ মুহূর্তে সরকারি বা বেসরকারি কোন পরিবহন ব্যবহারকেই নিরাপদ ভাবছে না। কারণ যানবাহনের ওপর পেট্রলবোমা এলোপাতাড়ি ছুড়ে মারা হচ্ছে। এ ধরনের দুর্ঘটনায় ৩০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নিরীহ মানুষ যারা কর্মস্থলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। চলতি অবরোধের কারণে জনজীবন এবং ব্যবসায় বাণিজ্য বিশেষ করে গার্মেন্টশিল্প দেশজুড়ে বিরাট টানাপড়েনের মধ্যে পড়েছে। অবরোধের কারণে ঢাকামুখী যানবাহনের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
ডয়েচে ভেলে: গার্মেন্ট খাতের ওপর ইতিমধ্যে যে প্রভাব পড়েছে তার মূল্যায়ন করুন।
হেনরিক: কতিপয় হিসাব অনুযায়ী, গার্মেন্ট খাতের উৎপাদন ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অনেক সময় তৈরী গার্মেন্ট রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কে অবরোধের কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বিজিএমইএ মনে করে, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তাদের আগের ও নতুন আদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। এটা যে কেবল ব্যবসায়ের জন্য খারাপ তাই নয়, কারণ এ কারখানা চালু থাকার ওপরে বহু শ্রমিকের মাসিক বেতন নির্ভর করছে। সঙ্কট গভীরতর হলে কারখানা যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ডয়েচে ভেলে: অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কি করে সব সময় ধর্মঘট ডেকে দিতে পারে?
হেনরিক: মহাত্মা গান্ধীর অধীনে বৃটিশ ঔপনেবিশেক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের সময় থেকে হরতাল বা বন্‌ধের ঐতিহ্যে চলে আসছে। অবশ্য বাংলাদেশে এখন যে ধরনের সহিংসপ্রবণ অবরোধ চলছে, তা শুরুতে অহিংস ছিল। এখন তা বিকৃত হয়ে পড়েছে।
ডয়েচে ভেলে: দেশটিতে মাঝেমধ্যেই হরতাল-ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা এ ধরনের কর্মসূচি কিভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে?
হেনরিক: যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে খুবই মজবুত মনে করা হয়। ২০১৫ সালের জন্য ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে চলমান অবরোধ ইতিমধ্যে অর্থনীতির ওপর টোল নেয়া শুরু করে দিয়েছে। ২০১৩ সালেও একই ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল। ২০১৪ সালের প্রথমার্ধে ওই অস্থিরতার প্রভাব পড়েছিল। আবার ২০১৪ সালের শেষদিকে অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হতে শুরু করে।
সে কারণে সহিংসতার দ্রুত অবসান ঘটা উচিত। পরিবহন শ্রমিকদের একটি অংশ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদে অংশ নেয়। কারণ অবরোধের কারণে তাদের রুজি-রোজগারে প্রভাব পড়েছে।
ডয়েচে ভেলে: সামনের মাসগুলোতে অর্থনীতির চেহারা কেমন হতে পারে?
হেনরিক: হরতাল-ধর্মঘট বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। তাই ২০১৫ সালে বাংলাদেশ অর্থনীতির পূর্বাভাস যেমনটা করা হয়েছিল, মানে ছয় ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধির স্থিতি, সেটা টিকে যেতে পারে। তবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশর উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এটা যদি না থাকতো তাহলে প্রবৃদ্ধি আরও ভাল হতে পারতো। এবারে অবরোধ যতটা দীর্ঘ সময় ধরে চলছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। অস্থিরতার ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারী, পোশাক রপ্তানিসহ অর্থনীতির অন্যান্য খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.