অবরোধে সরকারি বাস-ট্রাকও চলে না by মোল্লাহ রাশিম

বিরোধী জোটের ডাকা টানা অবরোধে মহাসড়কে চলছে না সরকারি বাস-ট্রাক। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে না বলে জানিয়েছেন বিআরটিসি’র কর্মকর্তারা। নিরাপত্তার কারণে সরকারি এ সংস্থার ট্রাক এবং লরিও চলছে না মহাসড়কে। পরিবহন না চলায় বেকার সময় পার করছেন সংস্থাটির কর্মীরা। মহাসড়কে যান চলাচলে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলা হলেও খোদ সরকারি সংস্থার যানবাহন নিরাপত্তাহীনতায় বন্ধ রাখায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বেসরকারি পরিবহন মালিকদের মধ্যে। বিভিন্ন রুটে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরাপত্তায় কিছু গাড়ি চালানোর উদ্যোগ নিলেও অবরোধকারীদের হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হওয়ায় এখন বেসরকারি পরিবহন মালিকরা রাস্তায় গাড়ি নামাতে ভরসা পাচ্ছেন না। গত ৫ই জানুয়ারির পর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)’র কোন গাড়ি দূরপাল্লায় চলাচল করছে না। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীসাধারণ ডিপোতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। মতিঝিল ডিপোর কাউন্টারে আসা যাত্রী রাজীব হোসেন বলেন, গত তিন চার দিন ধরে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ডিপোতে আসছি। কিন্তু টিকিট কাউন্টারে তালা। কোন নির্দেশনাও নেই যে, গাড়ি ছাড়বে কি ছাড়বে না। ডিপোর আশপাশের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে যানা যায়, প্রতিদিন অনেক লোক গ্রামে যাওয়ার জন্য এখানে আসছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ গাড়ি না ছাড়ার কারণে ফিয়ে যায়। বিআরটিসি’র মতিঝিল বাস ডিপোর ম্যানেজার নায়েব আলী জানান, যাত্রী না থাকায় আমরা দূরপাল্লার বাস ছাড়ছি না। শুক্রবার থেকে কিছু বাস চলাচল করছে। বিআরটিসি সূত্র জানায়, দূরপাল্লার ১৩টি রুটের প্রায় ৪৭০টি বাস ও ১শ’ ১৮টি ট্রাক প্রতিদিন চলাচল করে। কিন্তু গত ১৫দিন ধরে এসব বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব বাস-ট্রাক চলাচল করলে প্রতিদিন ৭০ লাখ টাকা আয় হয় সংস্থাটির।  গত ১৫ দিনে রাষ্ট্রীয় এ পরিবহন সংস্থাটির ১০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
বিআরটিসি’র সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মোট ২০টি বাস ডিপোর মধ্যে মতিঝিল থেকে ৮টি রুটে, কল্যাণপুর থেকে ৪টি রুটে, রংপুর থেকে ২২টি রুটে, কুমিল্লা থেকে ৫টি রুটে, পাবনা থেকে ১৯টি রুটে, বগুড়া থেকে ২৫টি রুটে, চট্টগ্রাম থেকে ৫টি রুটে, বরিশাল থেকে ১২টি রুটে, সিলেট থেকে ২টি রুটে, খুলনা থেকে ৯টি রুটে, নরসিংদী থেকে ৩টি রুটে নারায়ণগঞ্জ থেকে ২টি রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। এসব রুটে এসি, ননএসি, টিসিসহ সব মিলিয়ে মোট ৪শ’ ৭০টি বাস রয়েছে। অবরোধের কারণে বিআরটিসি’র দূরপাল্লার কোন রুটেই বাস চলাচল করছে না বলে অফিস সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বিষয়ে বিআরটিসি’র পরিচালক (প্রশাসন ও অপারেশন) মো. শামসুল আলম বলেন, আমরা গাড়ি চালাতে প্রস্তুত। কিন্তু পরিবহনের নিরাপত্তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে যাত্রীদের নিরাপত্তা। নিরাপত্তার কারণে চালাতে পারছি না।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির ২টি ট্রাক ডিপোতে মোট ১শ’ ১৮টি ট্রাক রয়েছে। এই ট্রাকগুলোও চলাচল করছে না নিরাপত্তার কারণে। অবরোধে প্রথম ১০ দিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিআরটিসি’র ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে বলে প্রধান কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার মধ্যে ১০টিতে মামলা হয়েছে ও অন্যগুলোর জন্য সাধারণ ডায়েরি করা হয়। বিআরটিসি’র ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের হিসাব অনুযায়ী এসব ভাঙচুরে ৮৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে বিআরটিসি’র সর্বমোট প্রায় ৩ হাজার কর্মচারী রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই দৈনিক বা রুট ভিত্তিক বেতন পান। বতর্মানে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ওইসব শ্রমিক বিপাকে আছে। এ বিষয়ে ‘বিআরটিসি শ্রমিক কর্মচারী লীগ’ এর সাধারণ সম্পাদক মো. হারুণ-অর-রশিদ জানান, যারা সরকারি বেতন পায় তাদের সমস্যা নাই। কিন্তু যারা দৈনিক মজুরি পায় তারাতো খুবই সমস্যায় আছে।

No comments

Powered by Blogger.