বাংলাদেশ দলের স্বপ্নযাত্রা আজ

ঘরের মাঠের প্রস্তুতি শেষ। এবার সময় হয়েছে লড়াইয়ের আসল ময়দানে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৫-এর বাকি আর মাত্র ২০ দিন। চার বছরের অপেক্ষা ঘুচবে ১৪ই ফেব্রুয়ারি। দর্শকদের প্রত্যাশা যেমন অনেক তেমনি ক্রিকেটারদের চোখেও স্বপ্ন অনেক। সেই স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশা নিয়ে দেশ ছাড়ছে আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটযোদ্ধারা। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে রাত ৯টায় হযরত শাহ্‌জালাল বিমানবন্দর থেকে ১৩ সদস্যের বিশ্বকাপ দল উড়াল দেবে অস্ট্রেলিয়ার পথে। সাকিব আল হাসান বিগ ব্যাশে খেলে অস্ট্রেলিয়াতেই রয়েছেন। আর তামিম যাবেন কাল। মাশরাফি বাহিনীকে সামলানোর দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। প্রধান প্রশিক্ষক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার চণ্ডিকা হাতুরুসিংহে। বোলিং কোচ রয়েছেন জিম্বাবুইয়ান তারকা হিথ স্ট্রিক। সঙ্গে আরও যাচ্ছেন ট্রেইনার-ফিজিও। তবে দলের সঙ্গে যাচ্ছেন না ইনজুরির জন্য চিকিৎসাধীন তামিম ইকবাল। দল তাঁবু গাড়বে ব্রিসবেনে। আর তামিমের চিকিৎসক ডেভিড ইয়ং বসেন মেলবোর্নে। তাই আগামীকাল তার সরাসরি মেলবোর্নে যাওয়ার কথা। এবারের অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে গড়ে সবচেয়ে কম বয়স বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের। বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়েও এরা পরস্পরের মুখোমুখি হবে প্রথম পরীক্ষায় ১৮ই ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের ১৫ জনের মধ্যে ৯ জনই এবার প্রথম বিশ্বকাপ খেলবে। মাশরাফি এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে খেললেও ২০১১তে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। আর গত আসরের অধিনায়ক সাকিব এবার রয়েছেন খেলোয়াড় হিসেবে।
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে সিরিজ খেলার পর ক্রিকেটাররা অংশ নেন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে। এরপর ১৫ জনের দল ঘোষণা করা হয় এ মাসের প্রথম সপ্তাহে। বিশ্বকাপ দলের আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরু হয় ১২ই জানুয়ারি। নানা কায়দায় ২০ দিনের অনুশীলন শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। আর ২০ দিন বাকি থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে নিজেদের মানিয়ে নিতে আগেভাগেই সেখানে যাচ্ছে দল। নিজেদের অনুশীলনের পর ৯ই ফ্রেব্রুয়ারি  সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ মিশন। ১২ই ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপরই মূল লড়াইয়ের জন্য দল প্রস্তত হবে।
১৯৭৫ সালে শুরু হওয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপের এটি একাদশ আসর হলেও বাংলাদেশের পঞ্চম বিশ্বকাপ এটি। বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ১৯৯৯ সালের আসরে। ১৯৯২ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের আয়োজক হলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ১৯৮৬ সালের ৩১শে মার্চ বাংলাদেশ প্রথম আইসিসি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। সেবার ইংল্যান্ডের মাটিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ রয়েছে ডেথ গ্রুপে। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ছাড়াও বাংলাদেশ দলের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড। ক্যানবেরাতে প্রথম ম্যাচ আফগানদের বিপক্ষে। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে অয়োজক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিসবেনে ২১শে ফেব্রুয়ারি। ২৬ ফেব্রুয়ারি মেলবোর্নে তৃতীয় খেলার প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। অবশ্য চতুর্থ ম্যাচটির জন্য বাংলাদেশ দলকে যেতে হবে নিউজিল্যান্ডে। ৫ই মার্চ নেলসনে মাশরাফি বাহিনীর প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। এরপর বাংলাদেশ ৫ম ম্যাচ খেলতে ফিরে আসবে অস্ট্রেলিয়াতে। অ্যাডিলেড ওভালে ৯ই মার্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল মাঠে নামবে। আর হ্যামিলটনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব।
গ্রুপের সাতটি দলের মধ্যে চারটি পরের রাউন্ডে অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে। যদি আইসিসি’র সহযোগী দুই দেশ আাফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের সঙ্গে জয়ের পর আরও একটি দলকে হারাতে পারে তাহলে বেঁচে থাকবে বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন। অধিনায়ক ও প্রধান কোচই নয়, দলের সব সদস্যেরই স্বপ্ন দ্বিতীয় রাউন্ড। এরই মধ্যে তারা দাবি করেছেন, সে সামর্থ তাদের আছে। অপেক্ষা কেবল মাঠে তা প্রমাণের।
বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, মুমিনুল হক সৌরভ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, আল আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম, আরাফাত সানি ও সৌম্য সরকার।

No comments

Powered by Blogger.