মমতাকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ by মিজানুর রহমান

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভাষার মাস বিশেষ করে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে তাকে ঢাকায় আনার চিন্তায় ওই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন। জানিয়েছেন, ভাষার মাসে ঢাকার আয়োজনে তাকে স্বাগত জানাতে চায় বাংলাদেশ। এদিকে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন বছরের প্রথম দিনে মুখ্যমন্ত্রী বরাবর আমন্ত্রণপত্রটি পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। কূটনৈতিক চ্যানেলে ওই দিনই এটি মমতা ব্যানার্জির দপ্তরে পৌঁছে। ওই পত্রে সফরের দিন-তারিখ প্রস্তাব করা হয়নি। তবে সেখানে ইঙ্গিত রয়েছে সফরটি ২১শে ফেব্রুয়ারি বা তার কাছাকাছি সময়ে হলে ঢাকা খুশি হবে। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে এবারের আয়োজনের বিষয়েও দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওদিকে অপর কূটনৈতিক সূত্রের দাবি মমতার পক্ষ থেকে ঢাকা সফরের ইতিবাচক সিগন্যাল পাওয়ার পরই বাংলাদেশ সরকার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। গত নভেম্বরে বাংলাদেশের একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল কলকাতা সফরে যায়। সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান এমপি’র নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। মমতা তাদের নবান্নে স্বাগত জানিয়ে ‘বাংলাদেশের মানুষ যেন তাকে ভুল না বোঝেন’ সেই আকুল আবেদন জানান। তিনি ঢাকা সফরের আগ্রহও ব্যক্ত করেন। বলেন, ‘ও দেশে আমাদের বাড়িঘর ছিল। আমি ওখানে যেতে চাই। রংচঙের রিকশায় চড়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে চাই।’ ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে সফরসঙ্গী না হওয়া এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে আপত্তির কারণে বাংলাদেশের মানুষ তার ওপরে ক্ষুব্ধ। মুখ্যমন্ত্রী সে বিষয়টি জানেন। এমপিদের তিনি বলেন, আজ এই প্রথম আপনাদের জানাচ্ছি, কেন্দ্রের জন্য সেদিন আমি ঢাকা যেতে পারিনি। গোছানো ব্যাগ খুলে ফেলতে হয়েছে। কষ্টে সেদিন চোখে জল এসে গিয়েছিল!’ কেবল তা-ই নয়, গত মাসে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ভারত সফরে গেলে কলকাতার এক অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জি দ্বিতীয় দফায় ঢাকা সফরের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের সম্মানে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে মমতা ব্যানার্জিও আমন্ত্রিত ছিলেন। আলাপের এক পর্যায়ে মমতাকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান প্রেসিডেন্ট। জবাবে আবদুল হামিদকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘দ্রুত ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। সেখানে রিকশায় করে ঘুরবো।’ ওই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতারও আশ্বাস বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের মৃত্যুর পর তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনে ঢাকায় আসতে চেয়েছিলেন মততা ব্যানার্জি। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্বাগত জানাতে সব রকম প্রস্তুতিও নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মমতা নিজেই এটি বাতিল করেন বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.