বন্ধ হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বাড়বে কর্মসংস্থান

বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সাল পার করার পর চীনের জন্য এ বছরটি নানামুখী সংস্কার-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রপ্তানি, অবকাঠামো ও আবাসন খাত থেকে অর্জিত প্রবৃদ্ধি এ বছর বন্ধ হতে যাচ্ছে বলে বেইজিংয়ের আশঙ্কা। এ বছর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে পারে চীন। তবে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে লে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। গত বছর জোরেশোরে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলে। এ বছরও রাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর তদন্ত হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে। রাজনীতিকদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকবে। কিন্তু গোটা ব্যবস্থাই এখন দুর্নীতিগ্রস্ত। এ কারণে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর সংস্কার কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিকদের অপসারণের প্রক্রিয়া চালু রাখবেন। তাঁদের বদলে বিশ্বস্ত সহকর্মীদের দায়িত্ব দেবেন। ক্ষমতাসীন দল চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সংকট জিনপিং কীভাবে মোকাবিলা করেন, নতুন বছরে সেটিই হবে দেখার মূল বিষয়। অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে ধারণা থাকলেও রাজনীতিতে এ ধরনের অংশগ্রহণ কমবে। জ্বালানি ও সাশ্রয়ী প্রকৌশল খাতে চীনের শক্তিশালী উপস্থিতি এ বছরও বহাল থাকবে। আর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পেও দেশটির অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকবে। যেমন: নাইজেরিয়ায় উচ্চগতির রেলব্যবস্থা স্থাপন এবং পানামা খালের আদলে নিকারাগুয়ার আলোচিত খাল খননকাজ। তবে নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ২০১৫ সালেও সীমিত রাখা হবে। দেশটির অন্তত ৪০ জন সাংবাদিক বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছেন।
সিপিসির পক্ষ থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হলেও তা কার্যত কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ‘আদর্শিক অসংগতির’ কারণেই হংকং এবং তাইওয়ানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাইওয়ানে ‘সূর্যমুখী আন্দোলন’ এবং স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে সেখানকার মানুষ চীনের অর্থনৈতিক ঐক্য থেকে দূরে থাকার ইচ্ছাই প্রকাশ করেছে। হংকংয়ে সাম্প্রতিক গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে প্রকাশ্য অবাধ্যতা বলে বিবেচনা করছে বেইজিং। দুটি ভূখণ্ডের ক্ষেত্রেই চীন ২০১৫ সালে নতুন কৌশল প্রয়োগ করবে। প্রেসিডেন্ট জিনপিং বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ও সূক্ষ্ম বিভিন্ন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীন এখনো পশ্চিমাদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। সরকারের তাগিদে ২০১৫ সালে দেশীয় উদ্ভাবনীমূলক অনেক উদ্যোগ দেখা যাবে। আবার শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রক্ষণশীলতা অব্যাহত থাকবে। শিল্পীদের নিজ নিজ কাজে ‘ইতিবাচক সামর্থ্য’ এবং ‘স্বাস্থ্যকর’ বিষয়বস্তুর প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্রনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কট্টর জাতীয়তাবাদ এবং যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী তর্জন-গর্জনের নীতি থেকে সম্প্রতি সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে বেইজিং। গত নভেম্বরের অ্যাপেক সম্মেলনে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে জিনপিংয়ের করমর্দনের ঘটনাটি দুই দেশের সম্পর্কে নতুন সূচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। জাপানের সঙ্গে পূর্ব চীন সাগরের সীমানা ও ইতিহাস নিয়ে বিতর্কের ওপর সম্পর্কের এই বরফ গলা কী প্রভাব ফেলে, সেটিও দেখার বিষয়। দক্ষিণ চীন সাগরে সীমানা নিয়ে কয়েকটি দেশের বিরোধ দি হেগের আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে তোলা হয়েছে। তবে চীন ফিলিপাইনের দায়ের করা মামলায় ওই আদালতের কর্তৃত্ব মানতে রাজি নয়। পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা রোগ প্রতিরোধ এবং হর্ন অব আফ্রিকায় জলদস্যুদের তৎপরতা বন্ধ করতে চীনকে আরও সক্রিয় হতে দেখা যাবে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পর কাবুলে চীনা কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়তে পারে।

No comments

Powered by Blogger.