মুসলিমদের অবমাননা করে পুলিশের ভিডিও ভারতে তীব্র ক্ষোভ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাটে আবার শুরু হয়েছে বিতর্ক। সেখানকার পুলিশ মুসলিম সাজিয়ে তামাশার এক নিরাপত্তা মহড়া করেছে। এতে মুসলিম সাজানো ব্যক্তিদের উপস্থাপন করা হয়েছে জঙ্গি হিসেবে। সুরাট জেলার একটি মহড়ার ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ জোব্বা ও টুপি পরিহিত মানুষদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। নর্মদা জেলায় আরেক ভিডিওতে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইসলাম জিন্দাবাদ স্লোগান দেয়ার দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা উপহাসের এমন নমুনায় ভারতজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। মুসলিম নেতারা ভিডিও দুটিকে জঘন্য এবং চরম নিন্দনীয় বলে অভিহিত করেছেন। ভারতের টিভি চ্যানেলে ভিডিও দুুটি প্রচার হওয়ার পর তোপের মুখে পড়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী আনান্দিবেন প্যাটেল স্বীকার করেছেন, ওই মহড়া ভুল ছিল। তিনি বলেন, ধর্মকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত করাটা ভুল। পুলিশের এহেন কীর্তির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি দাবি করেন, ইস্যুটি এখন সমাধান হয়েছে। এখন বিষয়টি বাদ দেয়া উচিত। ভুল শুধরানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে, একটি নির্দিষ্ট ধর্ম এবং সম্প্রদায়কে উপহাস করে পুলিশের তরফ থেকে অবজ্ঞামূলক ঘটনার অবতারনা কিভাবে শুধরানো হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে সমালোচনা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। তাদের দাবি, টুপি পরানো হয়েছিল তাদের ভিন্ন চেহারা দেয়ার জন্য। পরে আবার ক্ষমা চেয়ে স্বীকার করেছে ওই পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ ছিল। সুরাটের পুলিশ প্রধান প্রদীপ সেজুলকে উদ্ধৃত করে এএফপি বলেছে, ‘এটা ভুল ছিল আর এমনটা হওয়া উচিত হয়নি।  নর্মদার পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ঘটনার তদন্ত করবেন। জেলা পুলিশ কর্মকর্তা জয়পালসিং রাথোড় বলেছেন, এমন কোন ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে তারা তদন্ত করবেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। এদিকে মুসলিম নেতারা তীব্র সমালোচনা করেছেন এ ঘটনার। কামাল ফারুকী এনডিটিভিকে বলেন, ‘এর মাধ্যমে মুসলিমদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেটা অত্যন্ত খারাপ। তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর তা না হলে তাদের আদালতের সম্মুখীন করা উচিত।’ বিবিসি’র দিল্লি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে মোদি সরকার কিভাবে আচরণ করছে তা মানুষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় কমপক্ষে ১ হাজার মানুষ নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম। রক্তক্ষয়ী ওই সহিংসতা ঠেকাতে তেমন কিছু না করার অভিযোগ আসে মোদির বিরুদ্ধে। তবে তিনি এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেন। তদন্ত প্যানেলগুলোর কাছ থেকেও ছাড়পত্র পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মোদি সবার অংশগ্রহণমূলক নীতির কথা বলছেন। কিন্তু তার ভারতীয় জনতা পার্টির মূল ভিত্তি কট্টরপন্থি হিন্দুদের মধ্যে। আর এমন অনেক গ্রুপের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের জোরপূর্বক ধর্মান্তর করার অভিযোগ এসেছে। এমনকি সরকারের এক মন্ত্রীর নোংরা বক্তব্যের পর তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। নিরঞ্জন জ্যোতি নামের ওই মন্ত্রী হিন্দু ছাড়া বাকিদের উদ্দেশ্য করে যে কটূক্তি করেছিলেন তা নজিরবিহীন। এক সমাবেশে উপস্থিত  জনতাকে তিনি ‘রামজাদা’ (রামের সন্তান) আর ‘হারামজাদা’ (জারজ সন্তান)-এ দুয়ের মধ্য থেকে বেছে নিতে বলেন। নিরঞ্জনের ভাষাব্যঞ্জন মোদি অগ্রহণযোগ্য বললেও, তাকে বরখাস্ত করতে অস্বীকৃতি জানান। এবারে পুলিশের তরফ থেকে অবমাননামূলক আচরণের পর পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে-সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.