সিলেটের রাজপথেও উত্তাপ-উত্তেজনা by ওয়েছ খছরু

৫ই জানুয়ারিকে ঘিরে সিলেটেও উত্তাপ-উত্তেজনা। শুধু নগরেই নয়, উপজেলাগুলোতেও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। মুখোমুখি হতে যাচ্ছে প্রধান দু’টি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ইতিমধ্যে ৫ই জানুয়ারি মাঠ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপিও দিচ্ছে না ছাড়। এবার অধিকসংখ্যক লোকবল নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। সেই প্রস্তুতি বিএনপি’র তরফ থেকে ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। ওদিকে, গতকালও রাজপথে পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে, বিএনপি সমাবেশের নির্ধারিত স্থান রেজিস্ট্রারি মাঠে না গিয়ে কোর্ট পয়েন্টে কর্মসূচি পালন করেছে। আর পুলিশি বাধার কারণে রেজিস্ট্রারি মাঠ দখলে ছিল ছাত্রলীগের। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান তারা ওই মাঠে পালন করে। ৫ই জানুয়ারিকে ঘিরে সিলেটে রাজপথ দখলে নিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার রাত থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ রাজপথে সক্রিয় হয়েছে। আর গতকাল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতাবার্ষিকী উপলক্ষে হয়েছে শোডাউন। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সিলেটের রাজপথে আওয়ামী লীগের নেতাদের আধিক্য এখন বেশি। শুক্রবার বিকালে সিলেটের পাঠানটুলা এলাকায় সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের গাড়িবহরে হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাত থেকেই উত্তপ্ত হয়ে সিলেট। মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, মহানগর সভাপতি আলম খান মুক্তির নেতৃত্বে যুবলীগ ও মহানগর সভাপতি রাহাত তরফদারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ রাতে বিক্ষোভ করেছে। এ কারণে রাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সিলেট নগরী। নগরীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্ট এলাকা মিছিলে মিছিলে সরব হয়ে ওঠে। আর গতকাল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজপথে ছাত্রলীগ শোডাউন করেছে। এ শোডাউনে অংশ নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা। বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজপথে এ মহড়া দিয়েছে। তবে, আলোচনায় ছিল ৫ই জানুয়ারি। আওয়ামী লীগ নেতারা গতকাল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ৫ই জানুয়ারি সিলেটের পবিত্র মাটিতে গণ্ডগোলের চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ বসে থাকবে না। তারা বিশৃঙ্খলকারীদের রুখে দিতে রাজপথ দখলেই রাখবে। এদিকে, ৫ই জানুয়ারি সিলেটের রাজপথে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে মাঠে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সিলেট আওয়ামী লীগ জানায়, আগামী ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারের ১ম বর্ষপূতি এবং গণতন্ত্র মুুক্তি দিবস উপলক্ষে গণজমায়েতের ডাক দিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। ৫ই জানুয়ারি সকাল ১০টায় সিলেটের ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং সমমনা দল ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে গণজমায়েতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, ৫ই জানুয়ারি সিলেটে রাজপথে আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। এদিকে, ৫ই জানুয়ারির আগে সিলেটেও চলছে ধরপাকড় অভিযান। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ হরতাল কর্মসূচি পালনকালে সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে। আর শনিবার ভোররাতে আটক করা হয়েছে মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি চমন আহমদ জেহিনকে। বিমানবন্দর থানা পুলিশ ভোররাতে তার খাসদবিরস্থ বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ দাবি করেছে, জেহিনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। জেহিন গ্রেপ্তারের পর থেকে রাজপথে থাকা ছাত্রদলের কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর পরও ৫ই জানুয়ারি সিলেটের রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। ওই দিন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি যৌথ কর্মসূচি হাতে নিতে চাইছে। সে লক্ষ্যে শুক্রবার সিলেটে এসে পৌঁছেছেন বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি গতকাল সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে সিলেট মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার কথা ছিল। সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে গতকাল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন ছিল ছাত্রলীগের। একই সঙ্গে সিলেটে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও মহানগর আহ্বায়ক ডা. শাহরিযার হোসেন চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে বিএনপিও রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। সিলেট মহানগর বিএনপি নেতা আজমল বখত সাদেক জানিয়েছেন, সকাল থেকে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠ ছাত্রলীগের দখলে থাকায় তারা কোর্ট পয়েন্টেই কর্মসূচি পালন করেন। তবে, ওই কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতা শমসের মবিন চৌধুরীর অংশ নেয়ার কথা থাকলেও তিনি যাননি। সমাবেশে সিলেট বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ কারণে ওই দিন সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তারা রাজপথে অবস্থান করবেন। এদিকে, ৫ই জানুয়ারি রাজপথ দখলে রাখার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে সিলেট জেলা বিএনপি। এজন্য গতকাল রাতে সিলেট জেলা বিএনপির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ জানিয়েছেন, সিলেটের বিএনপি এখন বেশ শক্তিশালী। ইতিমধ্যে উপজেলা সম্মেলন শেষ হয়েছে। সুতরাং ৫ই জানুয়ারি সিলেটের রাজপথে শোডাউনের পাশাপাশি সব ক’টি উপজেলায়ও কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে, রাজপথে বিশৃঙ্খল অবস্থা ঠেকাতে পুলিশ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক। সিলেট মহানগর পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজপথে কাউকেই বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না। যারা বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তারা।

No comments

Powered by Blogger.