ধর্মকে মানবতার কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে -আইআরএইচএসের গোলটেবিল বৈঠক

দেশের বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, সকল ধর্মের পথ ভিন্ন কিন্তু উৎস এক। ধর্ম কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সব ধর্মেই মানুষের কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। তাই ধর্মকে মানবতার কল্যাণেই ব্যবহার করতে হবে। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত  গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। ‘ওয়ার্ল্ড পিস অ্যান্ড হিউম্যান সিভিলাইজেশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে ইন্টার রিলিজিয়ন হারমনি সোসাইটি (আইআরএইচএস)। এতে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশে বর্তমানে ধর্মের কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সেই তুলনায় আমাদের দেশ অনেক ভাল অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ উদাহরণ ক্রমান্বয়ে বিশ্বের সকল দেশে ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন হয় তা রাজনীতি ও সম্পদের লোভে ধর্মকে ব্যবহার করার কারণে। এসব ঘটনায় কাউকে ধর্মান্তরিত করার খবর পাওয়া যায়নি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে রাজনীতিবিদদের সহায়তায় আরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নেতৃত্ব দিতে হবে। আইআরএইচএসের ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান বলেন, সকল ধর্মের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবতার কল্যাণ করা। ধর্মকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহারের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে মানবতাবিরোধী কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে। রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী স্থিরাত্মানন্দ বলেন, সব ধর্মের লক্ষ্য এক। ধর্মকে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সবাইকে নিয়ে রংধনুর সাজে বিশ্বসভ্যতার জন্য কাজ করতে হবে। ঢাকার বিশপ ও চার্চ অব বাংলাদেশের মডারেটর রাইট রেভারেন্ড পল এস. সরকার বলেন, আমরা এমন এক সময়ে আছি যখন মানুষ ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে পার্থিব সুখের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। অনেকে ক্ষমতা লাভের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছে। আবার শ্রেণীস্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের প্রেসিডেন্ট সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরো বলেন, ধর্ম কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সকল ধর্মের মতামত শুনতে হবে। সবাই এক প্লাটফরমে এসে মানবতাকে উচ্চ স্তরে স্থান দিতে হবে। ঢাকাস্থ ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স) ডিডিক জে জুলহাজি বলেন, সারা বিশ্বে শান্তি ও মানবতার জন্য হাহাকার চলছে। কিভাবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো যায় সেজন্য সবাইকে এক হতে হবে। আইআরএইচএসের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে হলে সর্বপ্রথম ধর্মগুরুদের মন থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে হবে। ধর্মের মূল শিক্ষা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। আইআরএইচএসের মহাসচিব মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, মানুষের জন্যই ধর্ম। আর সেই ধর্মের নামে বিশ্বব্যাপী অনাচার, অত্যাচার হচ্ছে। ধর্মের মূল শিক্ষা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে।
আইআরএইচএসের সভাপতি আলহাজ মিয়া মুজিবুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, শুধু হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ সমাজ নয়। সব ধর্মের প্রধানগণ মিলে প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানব সমাজ। যে মানব সমাজ যার যার ধর্ম প্রচার পালন, চর্চা এবং অনুশীলন করবে স্বাধীনভাবে। এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের বিপদে-আপদে আপন  প্রিয়জনের মত পাশে এসে দাঁড়াবে। ধর্মে ধর্মে হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। থাকবে প্রেম-প্রীতি আর সৌহার্দ্যতা। বৈঠকের  শুরুতে কোরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. মতিয়ার রহমান বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের আলোকে ‘বিশ্ব শান্তি ও মানবতা’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আইআরএইচএসের মহাসচিব মনোরঞ্জন ঘোষালের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান, হীরালাল বড়ুয়া, ডিপি বড়ুয়া, জাফর ইকবাল সিদ্দিক, এল্ডার মাইকেল এ শাহ, যুগ্ম মহাসচিব উত্তম কুমার বড়ুয়া, জগদ্বন্ধু মহাপ্রকাশ মঠের সভাপতি কান্তিবন্ধু ব্রহ্মচারী, ইস্‌কন সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ, শিখ ধর্ম প্রচারক সিং বীর সিং, প্রফেসর ডা. রুহুল আমিন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.