চবিতে তাপস হত্যার বিচারের দাবি- একপক্ষের অবরোধ অন্যপক্ষের অভিযোগ

তাপস সরকার হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল সকালে পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স। ফলে সকাল থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীরা পড়ে দুর্ভোগে। এদিকে প্রক্টরের মদতেই বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে অপর বগিভিত্তিক সংগঠন সিএফসি। জানা যায়, তাপস হত্যার বিচারসহ ৬ দফা দাবিতে শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবরোধের ডাক দেয় চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স গ্রুপ। এতে শনিবার সকালে শহর থেকে ক্যাম্পাসগামী শাটল ট্রেনের ১২টি বগির হোস পাইপ কেটে দেয় তারা। এতে বিপাকে পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এদিকে শনিবার অবরোধ পালন হলেও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অবরোধ কর্মসূচি দুই দিনের জন্য স্থগিত করে তারা। ভিএক্স’র দেয়া ছয় দফা দাবি হলো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে নিহত ছাত্রলীগ সমর্থক তাপস সরকারের মূল হত্যাকারীদের বিচার, কর্তব্য অবহেলার কারণে হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইলের অপসারণ, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার, ছাত্রলীগকর্মীদের হলে অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ইতোপূর্বে আটক ‘নিরপরাধ’ নেতাকর্মীদের মুক্তি, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা ‘মিথ্যা অস্ত্র ও হত্যা মামলা’ প্রত্যাহার। এ ব্যাপারে সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের ছয় দফা দাবি না মানলে আগামী মঙ্গলবার থেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে। এ ব্যাপারে ষোলশহর স্টেশন মাস্টার সাহাবুদ্দিন জানান, কে বা কারা বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনের হোস পাইপ কেট ফেলে দিয়েছে। এতে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
সিএফসি’র বিবৃতি: প্রক্টরের প্রত্যক্ষ মদতেই তাপস হত্যাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করছে বলে অভিযোগ করেছে চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন সি এফসি গ্রুপের নেতাকর্মীরা। শনিবার এক সংবাদ বিবৃতিতে তারা সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তারা বলেন, প্রক্টরের মদতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধ ডেকেছে ভিএক্স গ্রুপ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর সিরাজ উদ্‌-দৌলা নিজস্ব পেটোয়া বাহিনী আশা, আরিফ, জালালকে দিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাপসকে হত্যা করেছে। এখন খুনিদের ক্যাম্পাস রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে অবরোধের নামে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করছে। এ সময় তাপস হত্যার সঠিক বিচারের জন্য প্রশাসনের এই ভূমিকা নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে না বলেও হুঁশিয়ারি করে দেয় তারা।
প্রসঙ্গত: গত ১৪ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ফুল দিতে গিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। এ সময় গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগকর্মী তাপস সরকার। তাপস সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত বগিভিত্তিক সংগঠন চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার’র (সিএফসি) নেতা। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সিএফসি’র পক্ষ থেকে ভিএক্স গ্রুপকে দায়ী করা হয়। পুলিশও জানায়, ভিএক্স গ্রুপের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশার গুলিতেই তাপস নিহত হন। অন্যদিকে ভিএক্স গ্রুপের দাবি, সিএফসি গ্রুপের নেতারা নিজেরাই তাদের কর্মীকে খুন করেছে। তারা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সিএফসি’র কয়েকজন নেতাকে দায়ী করেন। এ সময় উভয় গ্রুপ পাল্টাপাল্টি অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।

No comments

Powered by Blogger.