বাড়ছে উত্তেজনা, অজানা আতঙ্ক- প্রস্তুত জামায়াত, অপেক্ষা নির্দেশনার

ডেটলাইন ৫ জানুয়ারি। কী হবে আগামীকাল-সে প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। এখন পর্যন্ত দুই দলই মুখোমুখি অবস্থানে। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। সাধারণ মানুষ ভুগছেন অজানা আতঙ্কে। সবার দৃষ্টি রাজধানী ঢাকার দিকে। ইতিমধ্যে ঢাকায় ঢোকার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ঢাকামুখী বিভিন্ন রুটের যানবাহন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির মতো আগামীকালের কর্মসূচিতে যাওয়ার আগেই বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দলের যুগ্ম মহাসচিব অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় চালানো হচ্ছে তল্লাশি। গ্রেফতার এড়াতে নেতাকর্মীরা অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। জানা গেছে, নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকাগামী বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে বাস চলাচল বন্ধ করা হলেও কী কারণে বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তা তারা জানাননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার আহ্বানে নেতাকর্মীরা যেন রাজধানীতে না আসতে পারেন সে কারণেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে সাবেক প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিনটাকে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিনটাকে কেন্দ্র করে বিএনপির রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একই দিনে রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ করে দিনটি উদযাপন করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে।   বিএনপি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাপলা চত্বর অথবা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে। তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি দলটি। তবে, দলের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক জানান, অনুমতি না পেলেও আগামী ৫ জানুয়ারিতে মহাসমাবেশের করবে বিএনপি। অবশ্য  সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।
প্রস্তুত জামায়াত, অপেক্ষা নির্দেশনার
৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে জোটের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ প্রস্তুত জামায়াতে ইসলামী। দলটির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা এমন আভাস দিয়েছেন। জানা গেছে, জোটের নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীদের অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়েছে। দলটির নেতারা জানিয়েছে, আন্দোলন সফল করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে। গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনই এখন থেকে জোটবদ্ধভাবে করা হবে। অতীতে জোটের আন্দোলনে জামায়াতের ভূমিকা যেমন ছিল, আগামীতেও তা-ই হবে। এদিকে ৫ জানুয়ারির আন্দোলন সফল করার জন্য গতকাল শনিবার সারাদেশে প্রস্তুতি সভা করেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির।  এসব সভা থেকে নেতাকর্মীদের কাছে চূড়ান্ত আন্দোলনের ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, শিবিরের কেন্দ্র থেকে ঢাকাসহ সারা সকল নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “এই আন্দোলন হলো বাংলাদেশের মুসলমানদের রক্ষার আন্দোলন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন। এজন্য কেউ বাড়িতে থাকবেন না। সময়মতো রাজপথে নেমে আসতে হবে।” মহানগর উত্তরের এক প্রস্তুতি সভায় জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরা সদস্য ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. রেজাউল করিম বলেছেন, “অবৈধ সরকারকে দীর্ঘ একটি বছর সময় দেয়া হয়েছে, আর নয়। ৫ জানুয়ারি এই জুলুমবাজ সরকারের কবর রচনা হবে।  ওই দিন ছাত্রসমাজ রাস্তায় নেমে আসবে। রাজপথে ছাত্রসমাজকে নেতৃত্ব দেবে ইসলামী ছাত্রশিবির।” তিনি সব ভেদাভেদ ভুলে ৫ জানুয়ারি সকলকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। জোট সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, তখনই তিনি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.