বিরোধীদের ওপর বলপ্রয়োগ না করার আহ্বান এইচআরডব্লিউ’র

সরকারকে অবিলম্বে বিরোধী দলের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও গ্রেফতার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একইসঙ্গে মিডিয়া ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।   বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।   ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিতর্কিত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সারাদেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিরোধীদলের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সরকার এই দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি, জামায়াতকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়নি।”   সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে সংস্থাটির এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, “নির্বিচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার, নিয়মবর্হিভূত গ্রেফতার এবং মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে আরো উসকে দেবে।”   তিনি বলেন, “জনগণের অধিকার রক্ষার বাধ্যবাধকতা সরকারের রয়েছে। তবে এটা এমনভাবে যেন না হয় যে, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে।”   বিএনপি চেয়ারপারসনকে বন্দী রাখা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ৩ জানুয়ারি থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কার্যত তার কার্যালয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে। যদিও সরকার বলছে তাকে বন্দী করা হয়নি, তবুও তার বাসার চারদিকে অসংখ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, বাসার ফটকে তালা দেয়া হয়েছে, তাকে বাসা থেকে বের হতেও দেয়া হচ্ছে না। সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন, গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে খুনের মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পুলিশের অবস্থানের কারণে এ সপ্তাহে দুর্নীতির একটি মামলায়ও হাজিরা দিতে পারেননি খালেদা জিয়া।”   বিএনপি নেতাদের আটকের কথা তোলে ধরে এতে বলা হয়, “জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় গত ৬ জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে পুলিশ। বিক্ষোভে সহিংসতার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। বিক্ষোভে চারজন নিহত হয়েছেন এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারি দল ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। অপর দুইজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায়। এর পাশাপাশি বিএনপি অনান্যা নেতারা গ্রেফতার হয়েছে।”   সরকার মিডিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “বিরোধী দলের প্রচারে সহায়তার অভিযোগে মিডিয়াতেও হস্তক্ষেপ করছে সরকার। পর্নোগ্রাফি প্রচারের অভিযোগে গত ৭ জানুয়ারি একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের সরকার বিরোধী একটি বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করার একদিন পরই তাকে আটক করা হয়। বক্তব্য সম্প্রচারের পরই সরকার কোনো কারণ ছাড়াই সব মিডিয়ায় তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রচার নিষিদ্ধ করেছে।”   এতে বলা হয়, “সরকার বলছে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা সহিংসতা ও জ্বালাও পোড়াওয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এর স্বপক্ষে যুক্তিযুক্ত কারণ কিংবা প্রমাণ তারা দাঁড় করাতে পারেনি।”   বিরোধীদলকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “বিরোধীদলের নেতাদের উচিত তাদের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের সময় সংযত আচরণ করা।”   ২০১৪ সালে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভে শতাধিক লোক নিহত ও অনেকেই আহত হয়। বিরোধীদলের বিক্ষোভের জবাবে সরকার তাদের উপর দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়মবর্হিভূতভাবে খুন, গুম ও নির্বিচার গ্রেফতার করছে।   অ্যাডামস বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ের দমন-নিপীড়নে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার বিষয়টি হুমকির মুখে পড়ে গেছে।”   তিনি বলেন, “যে সরকার নিজেদের গণতান্ত্রিক দাবি করে, তাদের কাছ থেকে একটি টেলিভিশন মালিকের গ্রেফতার কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।”

No comments

Powered by Blogger.