ব্ল্যাকবক্স পাওয়ার আশা

বিধ্বস্ত এয়ারএশিয়ার উড়োজাহাজের কাঠামোর শেষ অংশের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা। এর ফলে উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা সম্ভব হবে আশা করা হচ্ছে। ‘টেইল’ বা পুচ্ছ হিসেবে পরিচিত উড়োজাহাজের শেষ অংশেই ব্ল্যাকবক্স থাকে। গতকাল বুধবার জাকার্তায় এক সংবাদ সম্মেলনে অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধান হেনরি বামবাং সোয়েলিস্তি বলেন, ‘আমরা টেইলের অংশ খুঁজে পেয়েছি, যার অনুসন্ধান আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল।’ তিনি জানান, সোনার স্ক্যান যন্ত্রের মাধ্যমে উড়োজাহাজটির পেছনের ওই অংশের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে ডুবুরিরা সেটি শনাক্ত করেন। ওই অংশটি যে এয়ারএশিয়ার উড়োজাহাজেরই, তা সাংবাদিকদের বোঝাতে পানির নিচ থেকে তোলা ভগ্নাবশেষের ছবি এবং উড়োজাহাজটির আগের পূর্ণাঙ্গ ছবি দেখান সোয়েলিস্তি। এখন ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চলছে বলে জানিয়ে সোয়েলিস্তি বলেন, ‘ছবি থেকে আমি নিশ্চিত করতে পারি যে আমরা যা খুঁজে পেয়েছি সেটি টেইলেরই অংশ।’ প্রাথমিক অনুসন্ধানের স্থান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এ অংশটি পাওয়া যায়। এয়ারএশিয়া ইন্দোনেশিয়ার ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ গত ২৮ ডিসেম্বর ১৬২ জন আরোহী নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। কয়েক দিন পর বোর্নিও দ্বীপের কাছে জাভা সাগরে এর ধ্বংসাবশেষের প্রথম কিছু অংশ ও কয়েকটি লাশের খোঁজ মেলে। এ পর্যন্ত ৪০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জাভা সাগরে অনুসন্ধানের কাজ বারবার ব্যাহত হয়। উদ্ধার অভিযানে উড়োজাহাজের পেছনের অংশের সন্ধানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কেননা এই অংশে থাকা ব্ল্যাকবক্সে ফ্লাইটের সব তথ্য রেকর্ড হয়ে থাকে। এর ভিত্তিতে উড়োজাহাজটি কেন বিধ্বস্ত হয়েছে তার কারণ জানা সম্ভব হওয়ার কথা। উড়োজাহাজের ওই অংশের সন্ধান পাওয়ার ঘোষণাটি দেওয়ার কয়েক মিনিট পরই এয়ারএশিয়ার প্রধান টনি ফার্নান্দেজ টুইটার বার্তায় বলেন, ‘পেছনের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে মনে করছি। এটা যদি সত্যিই ওই অংশ হয়ে থাকে তবে ব্ল্যাকবক্স সেখানেই রয়েছে।...আমাদের পরিবারের সদস্যদের দুঃখ লাঘবের জন্য আমাদের সব অংশ খুঁজে পাওয়া প্রয়োজন। যাতে আমরা আমাদের অতিথিদের খুঁজে পাই।’ তবে ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল জনসন সুপ্রিয়াদি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, উড়োজাহাজের পেছনের অংশটি সম্পূর্ণ অক্ষত না-ও থাকতে পারে। তিনি বলেন, ব্ল্যাকবক্সটি রয়েছে উড়োজাহাজের শেষ দিকে ডান পাশে দরজার পেছনে। উড়োজাহাজটির ওই অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়ে থাকতে পারে। উল্লেখ্য, উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্স প্রচণ্ড তাপ ও আঘাত সহ্য করার মতো করেই তৈরি করা হয়। উদ্ধার সংস্থার প্রধান সোয়েলিস্তি জানান, এ পর্যন্ত উড়োজাহাজটির ১২টি ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে বস্তুগুলোর সব কটি এয়ারএশিয়ার উড়োজাহাজটির অংশ কি না, তা নিশ্চিত করেননি। উড়োজাহাজটির মূল অংশে মৃতদেহ আটকা পড়ে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্তকারীরা ব্ল্যাকবক্সটি হাতে পেয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে না পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত উড়োজাহাজটির বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ নিয়ে রহস্য থেকে যাবে। যে এলাকা থেকে বিমানটি হারিয়ে যায়, সেটি প্রচণ্ড মৌসুমি ঝড়ের এলাকা হিসেবে পরিচিত। ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া সংস্থা বিএমকেজি বলেছে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে ইঞ্জিনে বরফ জমে তা বন্ধ হয়ে গিয়ে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে। এ দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় সুরাবায়া-সিঙ্গাপুর পথে এয়ারএশিয়ার রুট পারমিট বাতিল করে দেয়। ওই মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিবার ওই পথে এয়ারএশিয়ার ফ্লাইটের যাত্রার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ নিয়ম লঙ্ঘন করে রোববার যাত্রা করে। তবে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই অনিয়মের সঙ্গে দুর্ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।

No comments

Powered by Blogger.