কয়েস লোদী বিপাকে by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের ভার পেয়েছেন মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। কিন্তু নগর ভবনে চেয়ারে বসার আগেই টের পেতে শুরু করেছেন সে চেয়ারের ‘মহিমা’। অনাস্থা নামক চ্যালেঞ্জ নিঃশ্বাস ফেলছে তার ঘাড়ে। কয়েকজন কাউন্সিলর একাট্টা হয়ে চেয়ার টেনে নিতে চাইছেন তার। কয়েস লোদী মেয়রের ভার পেয়েছেন গত বুধবার, স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে। একই প্রজ্ঞাপনে সাময়িকভাবে পদহারা হন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়ই পদ হারাতে হয় মেয়র আরিফকে। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনেই অসন্তোষ কয়েস বিরোধীদের। তারা সামনে আনছেন কয়েস লোদীর মাথায় ঝুলা মামলাগুলো। কয়েস লোদীও দুটো মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। একটি মামলায় চার্জশিটভুক্ত  হওয়াই যেখানে মেয়র আরিফ পদহারা, সেখানে কয়েস লোদী সে পদটাই ‘পুরস্কার’ পেয়েছেন। এক যাত্রায় পৃথক ফল নিয়ে তাই অসন্তোষ তাদের। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সে অসন্তোষের প্রকাশ জানান দিলেন সিটি করপোরেশনের ১৩ কাউন্সিলর। গতকাল দুপুরে করপোরেশনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কয়েস লোদীর বিপক্ষে অবস্থান নেন তারা। তারা বলছেন, ইতিমধ্যেই নির্বাচিত মেয়র একজনকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সেখানে নতুন করে অন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদানের যৌক্তিকতা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেন। স্মরণযোগ্য যে, কিবরিয়া হত্যা মামলায় আত্মসমর্পণের আগে মেয়র আরিফ মেয়র প্যানেলের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন।
সাদা চোখে গল্প এমনই। তবে ভেতরে আরও গল্প আছে। গল্প খুঁজতে হলে যেতে হবে আরও পেছনে। ডেটলাইন ৯ই অক্টোবর ২০১৩। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মাসিক সভা। মেয়র প্যানেল নির্বাচন হন এদিনই। ঠিক হয়, মেয়রের অবর্তমানে কারা বসবেন মেয়রের চেয়ারে। ৩ সদস্যের প্রথম নামটিই ঠিক হয় কয়েস লোদীর। সবাই মেনে নেন। তবে কারও কারও মনে কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে নামটি। ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কয়েস লোদী এমনিতেই একটু ‘ভাব’ নিয়ে চলেন। ভারপ্রাপ্ত মেয়র হওয়ার সুযোগ পেলে তার সে ‘ভাব’ আরও  বেড়ে যাবে। তাদের সে ভয় আরও দৃঢ় হয় যখন কয়েস লোদী তার কার্যালয়ের সাইনবোর্ডে নিজের পরিচয় লিখেন ‘প্যানেল মেয়র’। একটা কিছু করার ভাবনা আসে কয়েস লোদীর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’দের মাথায়। কয়েস লোদীর প্রতিদ্বন্দ্বী কারা? যারা তাকে পছন্দ করেন না তারাই তার প্রতিদ্বন্দ্বী। এর মধ্যে মূল দুটো নাম তার প্রতিবেশী এলাকার দুই কাউন্সিলরের। এরা হলেন- ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ ও ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। ঘোঁট পাকান তারা। রেজওয়ান আহমদের প্রস্তাবের সূত্র ধরে ২০১৪ সালের ১০ই জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় অনাস্থার সুর ওঠে। সভায় উপস্থিত ২৯ জনের মধ্যে ২৬ জনই গোপন ভোটে কয়েস লোদীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে সিটি করপোরেশনের ৩৬ জনের মধ্যে ৩৩ জনেরই সম্মতিতে পাস হয় সে অনাস্থা। তবে মেয়র আরিফ যখন কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান তখন আবার কয়েস লোদীর পাল্লা ভারি হতে থাকে। হাওয়া যে কয়েস লোদীর দিকে বইছে তা টের পেয়ে তাকে সমর্থন জানিয়ে ১৭ই ডিসেম্বর নগরীর একটি হোটেলে গোপন বৈঠক করেন ১৩ কাউন্সিলর। বৈঠকের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সিটি কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন। উপস্থিত ছিলেন, এসএম  আবজাদ হোসেন, মো. ইলিয়াছুর রহমান, মখলিসুর রহমান কামরান, রকিবুল ইসলাম ঝলক, সিকন্দর  আলী, শান্তনু দত্ত সন্তু, সাইফুর আমিন বাকের, দিনার খান হাসু, আজাদুর রহমান আজাদ, মুশতাক আহমদ, জাহানারা খানম মিলন, শামীমা স্বাধীন।
কয়েস লোদী যেন ‘১৩’ এর ফেরেই আটকে আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘১৩’ কাউন্সিলর মিলে কয়েস লোদীকে প্রতিহতের যুদ্ধে নেমেছেন। নেপথ্য কুশীলব সেই দুজনই রেজওয়ান আহমদ ও ফরহাদ চৌধুরী শামীম। মেয়রের চেয়ারে কয়েস লোদীর অবস্থান তারা কোনভাবেই মানতে চান না। তারা চান না ‘নেতা’ হোন কয়েস লোদী। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কয়েস লোদীর বিরুদ্ধে অসন্তোষ ছড়ালেন ১৩ কাউন্সিলর। এরা হলেন- রেজওয়ান আহমদ, ফরহাদ চৌধুরী শামীম, মখলিছুর রহমান কামরান, দিনার খান হাসু, দিলোয়ার হোসাইন সজীব, আবদুর রকিব তুহিন, সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, রাজিক মিয়া, এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, কুহিনুর ইয়াসমীন ঝর্ণা, সালেহা কবির শেপী, আমেনা বেগম রুমি। তারা বলছেন, কয়েস লোদীর মেয়র হওয়ার যোগ্যতা নেই। তিনিও দুটো মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এর একটি হচ্ছে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হামলা-ভাঙচুরের। অন্যটি ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের। কয়েস বিরোধীদের বক্তব্য, যার প্রতি অধিকাংশ সিটি কাউন্সিলরেরই আস্থা নেই তিনি কিভাবে পুরো নগরের আস্থা হবেন?

No comments

Powered by Blogger.