প্রতিবাদকারীদের মৃত্যুর তদন্ত, আটককৃতদের মুক্তির আহবান অ্যামনেস্টির

বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রতিবাদকারীদের নিহত হবার ঘটনা তদন্ত এবং আটককৃতদের মুক্তি দিতে হবে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে বিশিষ্ট একজন সাংবাদিক এবং একজন বিরোধী দলের নেতা। আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান বিরোধী বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে এ সপ্তাহে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬ জন মানুষ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নিহত হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, অবিলম্বে এসব মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র তদন্ত শুরু করা এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। গত বছরে বিতর্কিত নির্বাচনের বছরপূর্তিতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সমর্থকদের রাজপথে নেমে অবরোধ পালনের আহ্বান জানান। ৫ ই জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয় থেকে বের হতে দেয়া হয় নি। এছাড়া সপ্তাহের শুরুতে পুলিশ একুশে টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করেছে। আটক করেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। আটক হয়েছে দলের অনেক নেতাকর্মী। আবদুস সালাম ও মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এমন অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। আব্বাস ফয়েজ বলেন, এসব গ্রেপ্তার বাক স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশের অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন তুলে ধরে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে হবে। নিজের অধিকার চর্চার কারণে কাউকে স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তার, হয়রানী বা হুমকি ধামকি দেয়া হবে না সেটা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে তা করতে হবে। (বগুড়ার ধুনটে পুলিশের শর্টগানের গুলিতে আহত যুবদলের নেতা আমিনুল ইসলাম ও ছাত্রদলের নেতা রাজু আহমেদ (বাঁ থেকে)। ছবি: প্রথম আলো)
পুলিশের গুলিতে ৩ অবরোধকারী আহত
বগুড়ার ধুনটে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নি‌ক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে তিনজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন উপজেলা বিএনপির এক নেতা। তবে পুলিশ একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম দাবি করেন, পুলিশের গুলিতে উপজেলা যুবদলের নেতা আমিনুল ইসলাম (৩০), ছাত্রদলের নেতা রাজু আহম্মেদ (২৮) ও উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান (২৫) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়াও পুলিশের লাঠির আঘাতে ‌বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, ছাত্রদলের নেতা রনজু, মিশু, শামীমসহ আরও অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে শেরপুর-ধুনট রোডের হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা অবরোধ ও মিছিল সমাবেশ করার চেষ্টা চালান। নাশকতার আশঙ্কায় মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগানের পাঁচটি গুলি ছোড়ে পুলিশ।
এ সময় অবরোধকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল মমিন, ফরিদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর হোসেন নামের পুলিশের চার সদস্য আহত হন। তাঁরা ধুনট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসানকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ধুনট সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বনি আমিন (৩০), উপজেলা মৎস্য দলের সাবেক সভাপতি সেলিম আহম্মেদ (৩২), ছাত্রদলের নেতা আলম হাসান (২০) এবং আবদুল হান্নানকেও (২৫) আটক করা হয়।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, সরকারি কাজে বাধা ও ইটপাটকেল নি‌ক্ষেপ করে পুলিশের চার সদস্যকে আহত করার ঘটনায় বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। গুলিবিদ্ধ মাহমুদুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.