চট্টগ্রামে পুলিশ প্রহরায় গাড়ি চালাতে রাজি নন চালকরা, রাতভর দুর্ভোগ

সারারাত অপেক্ষা করেও গাড়িতে উঠতে পারিনি। উঠবো কি করে ভাই। গাড়িইতো চলছে না। সবাই বলছে কাউন্টার থেকে নাকি বাস ছাড়ছে। কিন্তু এখানে এসে দেখছি তার উল্টো চিত্র। কোন পরিবহনই চলছে না। সাড়ে ৭ ঘণ্টা বসে ছিলাম। রাতে এসে ভোররাতে  গেছি। কাউন্টারের ম্যানেজার বলতে পারেননি কখন যাবে যশোর রোডের গাড়ি। চট্টগ্রামের গরীবুল্লাহ শাহ্‌ মাজার বাস কাউন্টারে এভাবেই দুর্ভোগের কথা বলছিলেন আরিফুর রহমান। তিনি বেসরকারি আল-আরাফা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। গতকাল যখন তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন ঘড়িতে সকাল সাড়ে ১০টা। কাউন্টার থেকে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরছিলেন এই ব্যক্তি। তবে কেবল তিনি নন, তার মতো গত দুইদিন ধরে বাড়ি আর কর্মস্থলে ফিরতে না পেরে চট্টগ্রামের বাস কাউন্টারগুলোতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার লোক। সরজমিনে গতকাল সকালে বাসমালিক সমিতির কর্মকর্তা, কাউন্টার ম্যানেজার ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমনি তথ্য।  চট্টগ্রামের গরীবুল্লাহ শাহ্‌ মাজার এলাকায় দূরপাল্লার ৫০টি রুটের গাড়ি ছেড়ে যায় প্রতিদিন। এসি-ননএসি। সব ধরনের গাড়ি রয়েছে বড় এই কাউন্টারে। অন্যদিন এখানে লোকজনের টিকিট পাওয়া দুস্কর হলেও গতকালের চিত্র ছিল ভিন্ন। লোকজনের ব্যাপক সমাগম হলেও তারা কেউই শহর ছাড়তে পারছেন না। কথা হলে যাত্রীদের কয়েকজন জানান, বিএনপি’র ডাকা লাগাতার অবরোধের কারণে কোন গাড়ি চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে চাইছে না। বিশেষ করে নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, খুলনা, যশোরসহ একাধিক রুটের সব গাড়ি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কায় বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যায়নি গত দুইদিন। যাত্রীদের বিশ্বাস, বিশ্ব ইজতেমার কারণে অবরোধ শিথিল হলে আবারও স্বাভাবিক হতে পারে পরিস্থিতি।  সরজমিনে গরীবুল্লাহ শাহ্‌ মাজার ছাড়াও চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, স্টেশন রোড, শুভপুর ও অলঙ্কার মোড়ের বাসকাউন্টারগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে যাত্রীদের মধ্যে রয়েছে হতাশা। অলঙ্কার মোড়ে কথা হয় ট্রাফিক পুলিশের এসআই রহিম উদ্দিনের সঙ্গে। তার দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি খালি হাতে ফিরছেন কাউন্টার থেকে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দায়িত্বের কারণে এমনিতে ছুটিছাটা পাই না। তবে এবার ৩ দিনের ছুটি নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে জানলাম এরমধ্যে অবরোধ পড়ে গেছে। তখন উপায় না দেখে কাউন্টারে খোঁজ নিতে এলাম। আগামী দুইদিনেও গাড়ি চলবে কিনা সন্দেহ। চট্টগ্রাম বাসমালিক সমিতির নেতারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বিভিন্ন কাউন্টার থেকে ১১০০ গাড়ি ছাড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এবারের চিত্র ভিন্ন। পুলিশ প্রহরায় বন্দর থেকে বুধবার রাতে ৫০টি পণ্যবাহী গাড়ি ছেড়ে যায়। সরকার থেকেও তাদেরকে পুলিশ প্রহরায় একইভাবে যাত্রীবাহী গাড়ি ছাড়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।  কিন্তু বাস মালিক নেতা গাড়ি পুড়ে ফেলার ভয়ে রাস্তায় পরিবহন নামাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, কতোদিন এভাবে পুলিশ দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে। তবে গতকাল থেকে দুই একটি বিআরটিসি’র গাড়ি চলাচল করতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায়। এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, সব ধরনের বড় গাড়ি বন্ধ রয়েছে। লোকজন এসে খোঁজ খবর করছে। আজকালের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো গাড়ি নামবে। কিন্তু কোন কিছু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চালকরা গাড়ি চালাতে চাইছে না।  তিনি আরও বলেন, জীবনের শঙ্কা নিয়ে কে গাড়ি চালাবে বলুন। তাছাড়া যেভাবে গাড়িতে পেট্টোল দিচ্ছে তাতে মুহূর্তেই ছাই হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকার গাড়ি। পুলিশ প্রহরায় অবশ্য কয়েকজন গাড়ি চালাতে রাজি হয়েছে। কিন্তু বাকিরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। নগর পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে পণ্যবাহী কন্টেইনারের দিকে বেশি নজর পুলিশ বিভাগের। বিজিবি’র প্রহরায় ইতিমধ্যে সাড়ে ৪০০ গাড়ি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছেড়ে গেছে। এসব গাড়ি চট্টগ্রাম দিয়ে সীতাকুণ্ডু হয়ে প্রথমে ফেনী চলে যাচ্ছে। এরপর সেখান থেকে পুলিশের আরেকটি দল তাদেরকে ঢাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছে।  নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত মানবজমিনকে বলেন, পুলিশ প্রহরায় গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেখা যাক কি হয়। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করবো যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

No comments

Powered by Blogger.