যমুনায় নাব্যতা–সংকট জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন

(মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যমুনা নদীতে নাব্যতা–সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে পণ্যবোঝাই জাহাজগুলো নোঙর করে রাখা হয়েছে। গত রোববার বিকেলে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের বরুরিয়া এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো) মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়ায় যমুনা নদীতে নাব্যতা–সংকটের কারণে আটকা পড়েছে প্রায় অর্ধশত মালবাহী জাহাজ। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এগুলো সেখানে নোঙর করে রাখা হয়েছে। আটকে পড়া জাহাজগুলোর বেশির ভাগই সারবোঝাই। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই সার যাওয়ার কথা। এখন অতিরিক্ত খরচ করে জাহাজগুলোর সার ছোট ছোট নৌযানে করে গন্তব্যে নেওয়া হচ্ছে। একাধিক জাহাজের চালক ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে তাঁরা সার বোঝাই করে চট্টগ্রাম নৌবন্দর ছেড়ে আসেন। কিন্তু যমুনায় নাব্যতা–সংকটের কারণে তাঁরা পাবনার নগরবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী গন্তব্যে যেতে পারছেন না। তাঁরা বলেন, নদীতে এসব জাহাজ চলাচলে কমপক্ষে ১২ ফুট গভীর পানির প্রয়োজন। কিন্তু শিবালয়ের বরুরিয়া এলাকায় যমুনা নদীতে বর্তমানে এই পরিমাণ পানি নেই। এ কারণে সেখানে আটকে পড়ার আশঙ্কায় পাটুরিয়া এলাকায় জাহাজগুলো নোঙর করা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি থেকে নোঙর করে থাকায় জাহাজের চালক ও শ্রমিকদের খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে গেছে। কেউ কেউ ফিরে গেছেন বাড়িতে।
গত রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, পাটুরিয়া ফেরিঘাটের পূর্ব পাশে বরুরিয়া এলাকায় জাহাজগুলো সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয়েছে। ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও বাল্কহেডে করে কয়েকটি জাহাজের সার পাঠানো হচ্ছে বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ীতে। ৭৭০ টন সার নিয়ে নোঙর করে ছিল এমভি আরিওল-১। জাহাজটির চালক সেলিম হোসেন বলেন, ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নৌবন্দর থেকে তিনি বাঘাবাড়ীর উদ্দেশে ছেড়ে আসেন। ৭ জানুয়ারি এখানে পৌঁছান। কিন্তু নদীতে নাব্যতাসংকটের কারণে গন্তব্যে যেতে পারছেন না।
একই কারণে বরুরিয়া এলাকায় নোঙর করে আছে এমভি লাভলী-২, এমভি তানজিদ-১, এমভি তানজিদ-২, এমভি দুই বন্ধু, এমভি সানজিদ, এমভি ফাহিম হোসাইন, এমভি মা-বাবার দোয়া-৫, এমভি প্রিন্স অব পশ্চিম নারিশা, এমভি মুগনী-১, এমভি আমিশা, এমভি আল-ইনসান, এমভি চাকলাদার-৩, এমভি সেতু-২, এমভি শিহাব খান, এমভি বসুন্ধরা-৩৬সহ অর্ধশত জাহাজ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমে সাধারণত নদীতে পানির গভীরতা কমে যায়। কিন্তু এ বছর মৌসুমের আগেই পানি কমে যাওয়ায় জাহাজ চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমভি রুমাইছা হক জাহাজের তত্ত্বাবধায়ক রুহুল আমিন জানান, তাঁর জাহাজে ৮০০ টন সার রয়েছে। এখন বাল্কহেডে করে প্রতি বস্তা সার পাঁচ টাকা হারে বরুরিয়া থেকে নগরবাড়ী পাঠানো হচ্ছে। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি সার রয়েছে। সেই হিসাবে মোট ১৬ হাজার বস্তা সার গন্তব্যে পৌঁছাতে এখন তাঁদের বাড়তি ৮০ হাজার টাকা লাগছে। এমভি তানজিদ-২-এর শ্রমিক ফেরদৌস হোসেন বলেন, ‘দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছি। প্রচণ্ড শীতে কষ্ট হচ্ছে।’
বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শাজাহান হোসেন বলেন, বর্তমানে যমুনা নদীর ওই অংশে নয় ফুট পানি রয়েছে। অতিরিক্ত পণ্যবোঝাইয়ের কারণে জাহাজগুলো আটকা পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.