অবরোধ-অসহযোগের মতো কর্মসূচি চায় জামায়াত by আহমেদ জামাল

সংলাপ ও নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার অবরোধ অথবা অসহযোগ আন্দোলনের মতো কঠিন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় জামায়াত। ৫ই জানুয়ারিকে সামনে রেখে এমন কর্মসূচি চায় দলটির নীতিনির্ধারকরা। তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের এমন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। তবে অপেক্ষা কেবল জোটবদ্ধ সিদ্ধান্তের। বিষয়টি স্বীকার করে জামায়াতের সহকারী প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, অবৈধ সরকারের পতন এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ে সারা দেশের মানুষ চায় কঠিন কর্মসূচি। এটা জামায়াতের একা চাওয়ার নয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   বলেছিলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য একটি নির্বাচন দরকার। ৫ই জানুয়ারি তিনি সংবিধান রক্ষার সেই নির্বাচন করেছেন। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী তার সেই কথা ভুলে গেছেন। উপেক্ষা করে চলেছেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গণদাবি। এ পর্যায়ে দেশী-বিদেশী সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ চায় এ সরকারের পতন এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ ক্ষেত্রে যে কোন কর্মসূচি পালনে প্রস্তুত জামায়াত।
সূত্র জানায়, চলমান প্রেক্ষাপটে স্বল্পমেয়াদি আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকার পতনের কথা ভাবছে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলটি। জামায়াতের এ কৌশলের সঙ্গে একমত জোটের বেশির ভাগ শরিক দল। তবে জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। সূত্র মতে, গত রোববার ২০ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল সংলাপ, নির্বাচন এবং সরকার পতন আন্দোলন নিয়ে। বৈঠকে জামায়াতের পক্ষ থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ডা. রেদওয়ান উল্লাহ শাহেদী উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, সংলাপ বা নির্বাচনী দাবি আদায়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে স্বল্প মেয়াদি আন্দোলনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনে সরকার পতন সহজ হয় না। তাই স্বল্প সময়ে সরকার পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অবরোধের মতো কর্মসূচি দিলেই ভাল। কারণ বিরোধী জোট অবরোধ ডাকলে সরকার নিজেই সারাদেশ অবরোধ করে। আর এ ধরনের কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে দিলে সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে। বৈঠকে প্রস্তাব ছিল, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে একটা হরতাল দিয়ে সরকার পতন আন্দোলন শুরু হবে। এ পর্যায়ে জামায়াতের অভিমত ব্যক্ত করে বলা হয়, একটি মাত্র হরতাল দিয়ে আন্দোলন শুরু করলে সরকার পতন হবে না। এ জন্য একটা টার্গেট নিয়ে মাঠে নামতে হবে। সরকারের পতন ঘটাতে হলে কঠিন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে এবং ওই আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনের এ কৌশল নিয়ে জোটের বেশির ভাগ শরিক একমত হলেও জোটের প্রধান শরিক বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে সবাই। জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে। কিন্তু তাতে যদি কোন ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে সরকার তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, সরকারের আচরণের উপর আন্দোলনের ধরন নির্ভর করছে। তার মতে, ২৯শে ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কিংবা চলো চলো ঢাকা চলোর মতো কর্মসূচি দিলে সরকারের পক্ষ থেকেই পুরো ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হবে। অন্যদিকে এই কর্মসূচি পালনে বাধার প্রতিবাদে জোটের পক্ষ থেকেও লাগাতার অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়া  যেতে পারে। এভাবে কয়েকদিন চলতে থাকলে সরকার এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়বে। এর পাশাপাশি দেশী-বিদেশী চাপ বাড়াতে হবে। তবে শরিক দলের কোন কোন নেতার মতে, সরাসরি কঠিন আন্দোলনে গেলে সরকার ওই আন্দোলনকে দমানোর জন্য  নেতাকর্মীদের ওপর মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বাড়িয়ে দেবে। তাতে সৃষ্ট সংঘাত সহিংসতার দায়ভার ২০ দলীয় জোটের ওপর প্রভাব ফেলবে। ফলে দেশী-বিদেশী বন্ধু মহল বিরূপ মনোভাব নিতে পারে-এমন ধারণা থেকেই বিএনপি সরাসরি কঠিন আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ চিন্তাভাবনা করছে। তারা ধীর লয়ে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে চাইছেন। এ ব্যাপারে জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ৫ই জানুয়ারি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি কালো দিন। এই দিনটিকে টার্গেট করে আমরা একটি কর্মসূচি পালন করতে চাই, জালেম সরকারকে বিদায় করতে চাই। তবে আমাদের সেই কর্মসূচির ধরন কেমন হবে তা ঠিক করবেন জোট নেত্রী খালেদা জিয়া। তার প্রতি জোটের শরিকদের পূর্ণ আস্থা আছে। 

No comments

Powered by Blogger.