যৌনকর্মীরা সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে চান

সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যৌনকর্মীরা। আজ শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে যৌনকর্মীদের জাতীয় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা বলেন, সমাজে চাহিদা আছে বলেই পেশাটির অস্তিত্ব আছে। তাই সমাজ থেকে যৌনকর্মীদের বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। দুর্জয় নারী সংঘের সাবেক সভানেত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, ‘সমাজে চাহিদা আছে বলেই আমরা আছি। তাহলে আমরা আলাদা থাকব কেন? আমরা আলাদা কবরস্থান চাই না। বাচ্চাদের জন্য আলাদা স্কুল চাই না। আমরা সবার সঙ্গে থাকব।’
দুর্জয় নারী সংঘ ও বাংলাদেশ উইমেনস হেলথ কোয়ালিশন যৌথভাবে ‘যৌনকর্মীদের আত্মমর্যাদা, সামাজিক স্বীকৃতি ও বাঁচার অধিকার’ শীর্ষক এই জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে যৌনকর্মীরা বলেন, ‘বাংলাদেশে যত যৌনকর্মী আছেন, তাঁদের কেউ স্বেচ্ছায় এ পেশায় আসেননি। সমাজের প্রভাবশালী অংশের অনেকেই তাঁদের কাছে যান। এঁরা রাতের বেলা যৌনকর্মীদের কাছে গেলেও দিনের বেলা তাঁদের এড়িয়ে চলেন এবং বেশ্যা, পতিতা, খারাপ মেয়েছেলে, মাগী বলে গাল দেন। এরা কখনো যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন না।’
সম্মেলনে বলা হয় বাংলাদেশে এখন ৭৪ হাজার ৩০০ নারী যৌনপেশায় রয়েছেন। এঁদের ৫৪ শতাংশ যৌনপল্লিতে, ৪১ শতাংশ ভাসমান এবং ৫ শতাংশ হোটেলে কাজ করেন। জাতীয় সম্মেলনে সারা দেশ থেকে ৭০০-র মতো যৌনকর্মী আসেন। এঁদের অনেকের সঙ্গেই ছিল তাঁদের সন্তানেরা। যৌনকর্মী মায়েরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। মুক্তি মহিলা সমিতির সভাপতি দৌলতদিয়া যৌনপল্লির মর্জিনা বেগম বলেন, দৌলতদিয়ায় ৮৮৬টি শিশু আছে। ২০০৪ সাল থেকে চলে আসা কর্মসূচির কারণে মাত্র ৩৮৩ শিশুকে পড়ালেখার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকিরা বাইরে থেকে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘শিশু শিশুই। আপনার বাচ্চা হোক বা আমার বাচ্চাই হোক। তাহলে বৈষম্য কেন? যৌনপল্লির ছোট্ট একটা কামরায় মা কাস্টমার ঢোকাবে, না বাচ্চাটা পড়বে?’
‘খুশি হব, শান্তি পাব, প্লিজ আমার কথা একটু শোনেন’
সম্মেলনে দুজন যৌনকর্মী এ পেশায় তাঁদের যুক্ত হওয়ার ইতিহাস বলেন। এঁদের একজন বলেন, ‘আমি খুব খুশি হব, শান্তি পাব। প্লিজ আমার কথা একটু শোনেন।’ ওই কর্মী বলেন, পেটের দায়ে ঢাকায় এসে ঠিকে ঝির কাজ নিয়েছিলেন। একটি বাসায় গৃহকর্তা ও অন্যটিতে মালিকের দুই ছেলে তাঁকে যৌন নির্যাতন করে। গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর এক নারী ঢাকায় এক বাসায় ভালো বেতনে কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেচে দেয়।
অপর এক যৌনকর্মী বলেন, তিনি স্রেফ একটা গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পরে ঢাকায় এসেছিলেন। এলাকার এক মহিলা তাঁকে মিরপুর মাজারে বকুলগাছের তলায় ফেলে চলে যান। কান্দুপট্টিতে সর্দারনীর ‘কাস্টমার’ ধরতে পারলে ভাত জুটত, নইলে মারধর। একপর্যায়ে তাঁকে সর্দারনী ‘কাস্টমার’ নিতে বাধ্য করে। বহুবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তখন অন্য যৌনকর্মীরা তাঁকে বোঝান, সমাজ আর তাঁকে গ্রহণ করবে না। একজনকে ভালোবেসেছিলেন, সন্তানও হয়েছে। কিন্তু সেই সন্তান স্বীকৃতি পায়নি।
নতুন আইন দরকার
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন কমিশনের সদস্য মো. শাহ আলম বলেন, যৌনকর্মীদের সুরক্ষায় নতুন আইন করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিলোপ আইনের খসড়া হয়েছে। ওই আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, বাবা-মায়ের পেশার কারণে কোনো শিশু শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হবে না। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন যথাযথ পুনর্বাসন ছাড়া যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সরকারের ন্যাশনাল এইডস ওএসটিডি গ্রোগাম, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউএনএইডসের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.