ড. লিলন হত্যার মূল হোতা উজ্জ্বল ভারতে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. শফিউল ইসলাম লিলন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল রাজশাহী সীমান্তের ওপারে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত গ্রাম শেখপাড়ায় অবস্থান করছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও এলাকাবাসীর সূত্র এ তথ্য জানায়। পুলিশের সূত্রগুলোও উজ্জ্বলের অবস্থান সম্পর্কে একই তথ্য দিয়েছেন।
রাজশাহী জেলা যুবদলের দুই নেতা ও এক ছাত্রদল নেতা সীমান্তের জিরোপয়েন্টে গিয়ে মাঝে মাঝেই উজ্জ্বলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন এমন তথ্যও দিয়েছেন একাধিক সূত্র। শুক্রবারও জেলা ছাত্রদলের এক যুগ্ম আহ্বায়ক উজ্জ্বলের সঙ্গে জিরোপয়েন্টে দেখা করেছেন। তার এই অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ অবগত বলে জানান ড. লিলন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন। ১৫ নভেম্বর বিকাল সোয়া ৩টার দিকে নগরীর চৌদ্দপায়ায় বাসার সামনে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে ড. শফিউল ইসলাম লিলনকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশ ও র‌্যাব হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে একযোগে মাঠে নামে। এরই অংশ হিসেবে ২২ নভেম্বর রাজশাহী ও গাজীপুর থেকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাটাখালি পৌর যুবদলের সভাপতি আরিফুল ইসলাম মানিকসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা। পরের দিন গ্রেফতারকৃতদের মিডিয়ার সামনে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিতে বলেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের পরিকল্পনা ও সহায়তায় ড. লিলনকে খুন করা হয়। কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীরা গ্রেফতারের পরপরই টের পেয়ে গাঢাকা দেন উজ্জ্বল। র‌্যাব তাকে গ্রেফতারে রাজশাহীর কাজলায় তার বাসাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তার সঙ্গে কিলিং মিশনের অন্যতম হোতা হুন্ডি ও অস্ত্র ব্যবসায়ী জামাই বাবুও রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সূত্রগুলো থেকে আরও জানা যায়, ২২ নভেম্বর রাতে যুবদল নেতা উজ্জ্বল দুই সঙ্গীসহ রাজশাহীর চরমাঝারদিয়াড় সীমান্তপথে ভারতে প্রবেশ করেন। তিনি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গি থানার সীমান্তবর্তী গ্রাম শেখপাড়ায় অবস্থান করছেন। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সুবাধে শেখপাড়ার প্রভাবশালী কয়েকজন চোরাকারবারির সঙ্গে আগে থেকেই উজ্জ্বলের গভীর যোগাযোগ ও সখ্য রয়েছে। সেখানে থেকেই জিরোপয়েন্টে এসে উজ্জ্বল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ অব্যাহত রেখেছেন। শেখপাড়া গ্রামে বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সহজলভ্য হওয়ায় দলীয় লোকজন ছাড়াও সহযোগীদের সঙ্গে উজ্জ্বলের যোগাযোগ অটুট রয়েছে। উজ্জ্বল সীমান্তের এই ভারতীয় গ্রামে বসেই তার রাজনীতি ও অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জেলা বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন।
ওই নেতার মতে, মূলত মতিহার থানা পুলিশের সঙ্গে উজ্জ্বলের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। মাদক ও অবৈধ অস্ত্র কারবারের কারণে পুলিশের সঙ্গে উজ্জ্বলের রয়েছে আর্থিক লেনদেন। আর এ কারণেই হাতের নাগালে পেয়েও পুলিশ উজ্জ্বলকে গ্রেফতার না করে নিরাপদে চলে যেতে দিয়েছে। এখনও উজ্জ্বলের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। ড. লিলন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, যুবদল নেতা উজ্জ্বলকে পুলিশ খুঁজছে। তাকে গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হলেও তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া উজ্জ্বলের সহযোগী জামাই বাবু বা হুন্ডি বাবুকেও পুলিশ গ্রেফতারে চেষ্টা করছে। তবে তিনি জানান, উজ্জ্বল রাজশাহী এলাকাতে নেই বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। রাজশাহী সীমান্তের ওপারে উজ্জ্বল অবস্থান করছে এমন তথ্য পাওয়া গেলেও পুলিশের কিছু করার নেই বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.