প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মজিনার সাক্ষাতের সম্ভাবনা কম

আনুষ্ঠানিকতার শুরু প্রায় তিন সপ্তাহ আগে থেকে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ঢাকা মিশন সম্পন্ন করে অবসর গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। বিষয়টি জানিয়ে কূটনৈতিক রেওয়াজ মতে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধী  নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ চেয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কূটনৈতিকপত্র পাঠায় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। কাছাকাছি সময়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকেও জানানো হয়। পররাষ্ট্র দপ্তরের তরফেও প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে ওই কূটনৈতিকপত্র পাঠিয়ে উভয়ের সুবিধাজনক সময়ে সাক্ষাতের অনুরোধ জানানো হয়। গত ১৫ই ডিসেম্বর প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ পেয়েছেন বিদায়ী মার্কিন দূত। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। পরদিন বিরোধী দলের নেতা  রওশন এরশাদ এবং গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী  আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ সেরেছেন। পররাষ্ট্র দপ্তর ও মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা অপেক্ষায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ক্ষণ পেতে। এখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্পষ্ট কিছুই বলা হয়নি। ড্যান মজিনা আগামীকাল রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। তার তরফে সরকারি দপ্তরগুলোতে পাঠানো কূটনৈতিক পত্রে এটি উল্লেখ করেই সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে তিনি চলে যাচ্ছেন এটি  পরবর্তী যোগাযোগেও সরকারি প্রতিনিধিদের নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকাকালেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরেছেন ড্যান মজিনা। গেল সপ্তাহে এক ঝটিকা সফরে দ্বিতীয় বারের মতো  পাবনা যান তিনি। সেখানে তিন কৃষকের সঙ্গে বুক মিলিয়ে বিদায় নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়া বাকি প্রত্যাশিত সব সাক্ষাৎ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে কিংবা বিদায়ের আগে হবে বলে দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়ে আছে। কিন্তু হাই প্রোফাইল একটি সাক্ষাতের বিষয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের টানাপড়েনের মধ্যেই পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছিল। কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল প্রধানমন্ত্রী তাকে সময় দেবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে  কূটনৈতিক অঙ্গন থেকে যে খবর পাওয়া গেছে তাতে সাক্ষাতের সম্ভাবনা খুবই কম।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৪শে নভেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করার মধ্য দিয়ে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ড্যান মজিনা। এক সপ্তাহের মধ্যেই (১লা ডিসেম্বর, ২০১১) তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক অংশীদারী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন। একই সঙ্গে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সফরের বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে তিনি গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। এখানে ১১২২ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এই সময়ে হিলারির সফর সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক অংশীদারী পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এখন নিয়মিত অংশীদারী সংলাপ হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত হলেও সরকারের নানা ইস্যুতে টানাপড়েন চলছেই। এর মধ্যেও ড্যান মজিনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছিলেন। সর্বশেষ তিনি গেল বছরের নভেম্বরে মার্কিন সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের প্রথম ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এর আগে পরে বহুবার চেষ্টা হয়েছে একান্ত সাক্ষাতের জন্য কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর তরফে সময় দেয়া হয়নি। ওই বিদায়ী সাক্ষাৎ হোক বা না হোক- ঢাকার কার্যক্রমে ‘সন্তুষ্টি’ নিয়েই আগামীকাল যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানে উঠছেন। তার আগে আজ বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে আসছেন মজিনা।

No comments

Powered by Blogger.