সুন্দরবনে আন্তর্জাতিক সংস্থার সুপারিশে পদক্ষেপ নেয়া হবে

বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ট্যাংকার ডুবির পর তা থেকে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজপ্রাণীর অবশ্যই ক্ষতি হয়েছে। তেলেমাখা গাছপালা ও লতাপাতা মরে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে শুরুতে তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির (জীববৈচিত্র্য ও জলজপ্রাণীর) আশংকা করা হয়েছিল এখন দেখে মনে হচ্ছে তা অনেক কম হয়েছে। পরিস্থিতি যতটা খারাপ মনে করেছিলাম পরিস্থিতি আসলে ততটা খারাপ না। এখনও কোনো জলজ বা বণ্যপ্রাণী মারা যায়নি। সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে। তারপরও ওই ফার্নেস অয়েলে আগামীতে সুন্দরবনের কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নিয়ে সরকার গবেষণা কাজ শুরু করবে। ওই গবেষণা ছাড়া এখনই কিছু বলা যাবে না। ওই সব সংস্থার গবেষণায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজপ্রাণীর ক্ষতির আশংকা থাকলে পরবর্তীতে যা করণীয় তা করবে সরকার। সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির ১০ দিন পর শুক্রবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, নদীখালে তেল ছড়িয়ে পড়ায় শ্যালা নদীর দুপাড়ের বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছে এখনও তেল লেগে রয়েছে। যেসব গাছের শ্বাসমূলে তেল ঢুকে রয়েছে সেসব গাছ আস্তে আস্তে শুকিয়ে মরে যাবে। তবে কিছুদিন গেলে পরে ওই সব স্থানে আবার নতুন করে গাছ জন্মাবে। সুন্দরবনের নদীখালে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে যারা সহযোগিতা করছেন তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে তেল অপসারণের কাজ আরও এগিয়ে নিতে বনবিভাগকে নির্দেশ দেন তিনি। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সি-প্লেনে করে তিনি সুন্দরবন পরিদর্শনে আসেন। তিনি এসময় মংলা নদীর নারকেলতলা এলাকায় নেমে স্পিডবোটযোগে ট্যাংকার ডুবির ঘটনাস্থল শ্যালা নদীর জয়মনি বাদামতলাসহ অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকা পরিদর্শন করেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় তিনি সি-প্লেনে করে ঢাকার উদ্দেশে সুন্দরবন ত্যাগ করেন। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমান, বনবিভাগের প্রধান বনসংরক্ষক মো. ইউনুস আলী, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রাইসুল আলম মণ্ডল, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ, পরিবেশ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, সুন্দরবন-খুলনাঞ্চলের বনসংরক্ষক কার্তিক চন্দ্র সরকারসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মংলার আহ্বায়ক মো. নূর আলম জানান, জলজপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে যা দৃশ্যমান নয়। বনের এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শুরুতেই যে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল তা করা হয়নি। অগণিত গাছের শ্বাসমূল তেলে আবৃত হয়ে আছে- যা অপসারণ করা কতটা সম্ভব তা ভাববার বিষয়।
তিনি জানান, বনের বৃক্ষরাজির শ্বাসমূলসহ বন্যপ্রাণীর খাবারের উৎস বন্যঘাস লতায় তেল লেগে থাকার ফলে বনের ইকো সিস্টেম ভেঙে পড়ছে। বন্যপ্রাণী বিশেষ করে হরিণের খাদ্যাভাব দেখা দেবে- গভীর সংকটে পড়বে সুন্দরবনের উদ্ভিদ।

No comments

Powered by Blogger.