কান্না থামছে না পাকিস্তানে

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক শেষ হলেও পাকিস্তানে মানুষের মনে এখনও তাজা ক্ষত। প্রতিটি মুহূর্ত আচ্ছন্ন করে রেখেছে হারিয়ে যাওয়া মায়াবী সব মুখ। পেশোয়ারে স্কুলে তালেবান হামলায় ১৩২ ছাত্রসহ কমপক্ষে ১৪৮ জনকে হত্যায় মুষড়ে পড়েছে পাকিস্তান। তাই দেশকে তালেবান, সন্ত্রাস, জঙ্গিমুক্ত করতে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন সরকারি, বিরোধী দলের সব নেতা। গতকাল শেষ হয়েছে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের সময়। কিন্তু এখনও ওই স্কুলের দিকে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে ওঠেন সাধারণ মানুষ। সন্তানহারা পিতা-মাতার অবস্থা তো বর্ণনা করার মতো নয়। দেশটির সামরিক আদালত ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল এমন ৬ জনের ফাঁসির রায়ে স্বাক্ষর করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ। তবে ২৬/১১তে মুম্বই হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম জাকিউর রহমান লাকভিকে জামিন দেয়ায় কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত। এ দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পেশোয়ার হামলার একদিন পরেই লাকভিকে জামিন দিয়ে পাকিস্তান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে মস্করা করছে। ওদিকে পেশোয়ারে হামলা চালানোর আগে তালেবানরা সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সন্তানদের একটি হিট লিস্ট করেছিল। তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান এমনটা নিশ্চিত করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকা খবর দিয়েছে। তারা ইমেইলের মাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তালেবানরা সেনাবাহিনীর প্রথম সারির কর্মকর্তাদের কমপক্ষে ৫০টি ছেলেকে তালিকাভুক্ত করে টার্গেট করে হত্যার জন্য।  তাই স্কুলের মিলনায়তনে যখন ছাত্রদের প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিল সেখানে হামলা করা হয়। কারণ, সেখানে উপস্থিত ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। এ ইমেইলের জবাবে নওয়াজ শরীফ বলেছেন, প্রতিটি শিশুর রক্তের প্রতি ফোঁটার জবাব নিশ্চিত করবে জাতি। ওদিকে, সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ বুধবার এক টুইট-বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে সব সন্ত্রাসীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ওই বার্তায় তিনি লিখেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩ হাজারের বেশি সন্ত্রাসীকে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। এদিকে সেনাপ্রধানের এ টুইট-বার্তার একদিন পর বৃহস্পতিবার লস্কর-ই-তৈয়্যবার কমান্ডার জাকির-উর রহমান লাকভি জামিনে মুক্তি পান। পেশোয়ারে সেনা পরিচালিত স্কুলে হামলার ঘটনায় ১৩২ স্কুলশিশুসহ ১৪৮ জন নিহতের ঘটনায় শোকাহত ও ক্ষুব্ধ রাহিল শরীফ টুইটারে দেয়া ঘোষণায় বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। যারা সন্ত্রাসীদের পক্ষে কথা বলেন, তাদের বিরুদ্ধে এখন কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। অপর এক টুইট-বার্তায় জেনারেল রাহিল শরীফ তেহরিক-ই-তালেবানের সদস্যদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে লিখেছেন, টিটিপি’কে বার্তা। তোমরা আমাদের সন্তানকে হত্যা করেছো। এখন তোমরা এর মারাত্মক পরিণতি দেখবে এবং মূল্য দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকো। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফেরেশতার মতো শিশুদের রক্তের প্রতিটি ফোঁটার প্রতিশোধ নেবে। এটা আমার প্রতিজ্ঞা। তালেবানের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাহিল শরীফ। তার নেতৃত্বেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী এবং তাদের পূর্বেকার নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়েছে। ওদিকে জাকিউর রহমান লাকভির জামিনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তান সরকারের কৌঁসুলি মোহাম্মদ আজহার চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি হাইকোর্টে আপিল জমা দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমি সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। এরপর আমি সোমবার ইসলামাবাদে ওই আদেশের বিরুদ্ধে লড়ব। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আদালত বৃহস্পতিবার ১০ লাখ রুপির বন্ডের বিনিময়ে লাকভির জামিন মঞ্জুর করে। তাৎক্ষণিকভাবে আদালতের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানায় ভারত। তাছাড়া, পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে তালেবান জঙ্গি হামলার পর লাকভির জামিনের এ রায়ে পাকিস্তান সরকার চাপের মুখে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে। জামিন পাওয়া লাকভিকে অন্য একটি মামলায় ফের জেলেই রাখা হয়েছে। মুম্বই হামলার সময় লস্কর-ই-তৈয়বার দায়িত্বে থাকা লাকভি তার অন্য সহযোগীদের নিয়ে হামলার ছক কষে। ওই হামলায় ১৬৫ জন নিহত হয়েছিল। লড়াইয়ে নিহত হয় ৯ জঙ্গিও। ভারত এবং পাকিস্তানের শান্তি প্রচেষ্টায় ব্যাঘাত ঘটায় মুম্বইয়ের ওই হামলা।

No comments

Powered by Blogger.