পছন্দের লোকের অভাবে তিন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের পদ শূন্য! by আমানুর রহমান

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা তাসলিমা বেগমের অবসরোত্তর ছুটি শুরু হতে না হতেই নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপিকা দিলারা হাফিজ। এখনো তিনটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য রয়েছে। এখানে ভারপ্রাপ্তরা দায়িত্ব পালন করছেন। বোর্ডগুলো হচ্ছেÑ সিলেট, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এ দিকে চলতি নভেম্বর মাস থেকে সারা দেশে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। দুই মাস পর শুরু হবে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। তারও দুই মাস পর শুরু হবে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এ সব ক’টিই বড় বড় পাবলিক পরীক্ষা। এসব পরীক্ষায় প্রায় অর্ধ কোটির মতো শিক্ষার্থী অংশ নেবে। বোর্ডগুলোকেই তাদের প্রশ্ন ও খাতা মূল্যায়নের মতো স্পর্শকাতর নিরাপত্তার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। কিন্তু দু’টি বিশেষায়িত এবং একটি সাধারণ বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তার পদে ভারপ্রাপ্ত একজনকে দিয়ে কিভাবে প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। কারণ গত দুই বছর ধরে সারা দেশের সব ক’টি পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। আর গেল পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা বিশেষ করে এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সারা দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষার সময় অন্তত পাঁচটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে ভারপ্রাপ্তরা দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো সূত্রে জানা গেছে, বোর্ড চেয়ারম্যান পদে একজন সিনিয়র অধ্যাপককে মূলত দায়িত্ব দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং সরকার সমর্থক শিক্ষকদের। আরেকটি যোগ্যতা বিবেচনা করা হয়েছে। তা হচ্ছে মন্ত্রীর একান্ত সচিবের সিন্ডিকেটের সমর্থক বা সিন্ডিকেটকে তুষ্ট করতে পারদর্শী কি না? অভিযোগ রয়েছে, ওই যোগ্যতার শতভাগ পূরণ করার কারণেই মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে নতুন কাউকে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না। মাদরাসা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এ কে এম ছায়েফ উল্ল্যা। তিনি ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রীর প্রটোকল অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। তাকে প্রথমে বোর্ডের রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেয়া হয় এবং পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। তিনি মন্ত্রীর ও তার এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ ওরফে মনি ওরফে ফেমাস বাড়ৈর অত্যন্ত আস্থাভাজন। আর গত ২৮ এপ্রিল থেকে সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য রয়েছে। এর পর থেকে সিলেট বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বোর্ড সচিব অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া তরফদার। তিনিও মন্ত্রীর এপিএসের আস্থাভাজন বলে জানা গেছে। আর কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বোর্ডেরই সচিব ড. মো: আবদুল হক তালুকদার। তার বিরুদ্ধে সনদবাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনিও মন্ত্রী এপিএসকে তুষ্ট করেই বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদটি দখলে রেখেছেন। গত আগস্ট থেকে এ পদটি শূন্য রয়েছে।
অপর দিকে গতকাল (৩০ অক্টোবর) থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে গেছেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা তাসলিমা বেগম। তিনি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ননদ। সিনিয়র অধ্যাপক হওয়ার পরও মন্ত্রীর আত্মীয়তার সুবাদে তিনি চেয়ারম্যানের পদ পেয়েছেন। তার আগে ছিলেন অধ্যাপিকা ফাহিমা খাতুন। যিনি বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক। তিনিও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বোন এবং আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মোক্তাদির চৌধুরীর সহধর্র্মিণী। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপিকা দিলারা হাফিজ। অধ্যাপিকা তাসলিমা বেগমের অবসরোত্তর ছুটি শুরু হতে না হতেই গতকাল বিকেলেই তাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি আওয়ামী ঘরানা হিসেবে পরিচিত কবি রফিক আজাদের সহধর্র্মিণী। দিলারা হাফিজও একজন কবি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা বোর্ড হচ্ছে সব বোর্ডের মধ্যে নেতৃস্থানীয় বোর্ড। এ বোর্ড চেয়ারম্যানই আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পাবলিক পরীক্ষা সমন্বয়ের জন্য এ পদ ও ব্যক্তিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চেয়ারম্যানে পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য অর্ধ-শতাধিক সিনিয়র অধ্যাপক আছেন। কিন্তু বেশির ভাগ অধ্যাপকই তদবির করে, প্রভাবশালীদের লবিংয়ে কিংবা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বোর্ডের চেয়ারম্যান হতে নারাজ। কারণ বোর্ডগুলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন, প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অনুমোদন ও নবায়নসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। এসব কাজে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীসহ নানামুখী অনৈতিক চাপ সামলাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডের বিধিবিধান উপেক্ষা করে প্রভাবশালীদের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হয়।

No comments

Powered by Blogger.