আল আকসা মসজিদ বন্ধ করে দেয়া- পবিত্র স্থান নিয়ে জবরদস্তি নয়

জেরুসালেমের আল আকসা মসজিদ কমপ্লেক্স বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। সামান্য একটি ঘটনাকে অছিলা ধরে মসজিদটি বন্ধ করে দেয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। ১৯৬৭ সালে যুদ্ধের পর আর কখনো এভাবে পুরো মসজিদটি মুসল্লিদের জন্য সিলগালা করা হয়নি। মসজিদটির অবস্থান পূর্ব জেরুসালেমের আল হারাম আল শরিফ চত্বরে। জর্দান ও ফিলিস্তিনের যৌথ একটি কর্তৃপক্ষ এর তত্ত্বাবধায়ক হলেও ইসরাইল জোরপূর্বক এটি বন্ধ করে দিয়েছে। মক্কা ও মদিনার পর মুসলমানেরা এটিকে সবচেয়ে পবিত্র এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে। সাম্প্রদায়িক মনোভঙ্গিতে পরিচালিত রাষ্ট্র ইসরাইলের ধর্মীয় কাজে বাধা দিতে একটুও বাধেনি। গত বুধবার রাতে একজন ইহুদি গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন একজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইলি পুলিশ। একজন ব্যক্তি আহত হওয়ার বিপরীত সুনর্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হলো। বাড়তি হিসেবে বন্ধ করে দেয়া হলো আল আকসা মসজিদ। ইয়েহুদা হিক নামের আহত ব্যক্তি প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক চিন্তার ইহুদি; যিনি টেম্পল মাউন্ট এলাকায় পবিত্র স্থানগুলোতে ইহুদিদের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সেদিন জেরুসালেমে একটি সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে গুলিবিদ্ধ হন দণিপন্থী ইহুদি এই নেতা।
মসজিদ বন্ধের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ-উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে তারা বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ ঘটনাকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন। এ ধরনের পদেেপর বিরুদ্ধে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। মাহমুদ আব্বাসের এ ধরনের প্রতিক্রিয়া মূলত একটি আনুষ্ঠানিকতার প্রকাশ। বর্ণবাদী ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের হুমকি প্রকৃতপক্ষে দুর্বলের আত্মতুষ্টির হুঙ্কার ছাড়া অন্য কিছু নয়। মানবতার বিরুদ্ধে ইসরাইল যেসব অপরাধ করে চলেছে সে জন্য তারা কাউকে থোড়াই কেয়ার করে। মসজিদ বন্ধের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা বহু দূরের বিষয়।
মসজিদ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। সেখানে কারো প্রবেশে বাধা থাকে না। মসজিদুল আকসা নিয়ে মুসলিমদের দীর্ঘ স্মৃতি জড়িত। এটি খ্রিষ্টান ও ইহুদিদেরও পবিত্র স্থান। এটির ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ কিংবা বন্ধ রাখার অধিকার কারো নেই। আকসার বৈধ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে জর্দান ও ফিলিস্তিনি ওয়াকফ। যেভাবে ইসরাইল জোরপূর্বক এটি বন্ধ করেছে তাতে অনুভূতিশীল প্রত্যেক মানুষকে আঘাত করেছে। পবিত্র স্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক মনোভাবের প্রকাশ ঘটাতে পবিত্র স্থান আক্রান্ত হতে পারে না। মসজিদুল আকসাকে ইহুদি আগ্রাসন থেকে বাঁচানোর জন্য সবাইকে একযোগে কথা বলা ও প্রতিবাদ জানানো প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.