স্মৃতিতে দৈনিক আমার দেশ দাঁড়ানোর জায়গা নেই by আবু সালেহ আকন

আমার দেশ। ঠিকানা এখনো রাজধানীর কারওয়ানবাজারের বিএসইসি ভবন। ভবনটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু ভেতরের ঠিকানা পুড়ে ছারখার আগুনের লেলিহান শিখায়। চারদিকে এখন শুধু বিচ্ছিন্নতার হাহাকার।  প্রতিদিনের মতো গতকাল শনিবার সকালেও সাংবাদিকেরা এসেছিলেন। কিন্তু অফিসে ঢোকার কোনোই পরিবেশ ছিল না। ভেতরের পোড়া গন্ধ তখনো মিলিয়ে যায়নি। কেউ ছিলেন ফুটপাথে, কেউ ভবনের ফোরে, কেউ পাশের টি কে ভবনের সিঁড়িতে। আবার কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে। অফিসটা আজ শুধুই স্মৃতি তাদের কাছে।  ছোট্ট মেয়ে রোজা, বয়স ৮। প্রায়ই অফিসে আসতো মায়ের সাথে। মা সাংবাদিক এমরানা আহমেদ আজো মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন। রোজার আজ ছোটাছুটি ছিল না। কাদা পানি দেখে ভেতরেও যায়নি সে। মায়ের আচল ধরে পেছন থেকে উঁকি মেরে দেখছিল সব।

>> বিএসইসি ভবনে গত শুক্রবারের আগুনে পুড়ে যাওয়া আমার দেশ কার্যালয় : নয়া দিগন্ত
গতকাল অনেকেই পুড়ে যাওয়া আমার দেশ কার্যালয় পরিদর্শনের জন্য এসেছিলেন। দেখেছেন ঘুরে ঘুরে। সাংবাদিকদের উৎকর্ষ সাধনের জন্য গচ্ছিত তথ্য প্রমাণাদিও অবশিষ্ট নেই। যতœ করে রাখা কাগজপত্র, আসবাবপত্র সব পুড়ে ছাই। আগুন নেভানোর এক ঘণ্টা পর আমার দেশের সিটি এডিটর এম আব্দুল্লাহসহ অনেকেই ছুটে গিয়েছিলেন। তাদের সেই প্রিয় চেয়ার পড়ে আছে, রয়েছে কম্পিউটার, রয়েছে ড্রয়ার, ফাইলপত্র সবই। কিন্তু কিছুই অক্ষত নেই। এর কোনোটির শুধুই ছাই, আর কোনোটি আধপোড়া। চার দিক শুধু বিপর্যস্ত আর বিধ্বস্ত। পত্রিকা অফিসটি এক সময় সাংবাদিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতিবিদসহ নানা কলাকুশলীদের পদচারণায় ছিল মুখর। কিন্তু আজ দাঁড়ানোর জায়গাটিও নেই। মাথার উপরের নানা রঙের ফেস্টুন বেলুনও ঝুলছে না। পায়ের নিচে হাঁটু সমান পুড়ে যাওয়া কাগজপত্র-আসবাবপত্র পানিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে।
নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, কবি আব্দুল হ্ইা শিকদার, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরীসহ আরো অনেকে গতকালও পত্রিকা অফিসে আসেন। কিন্তু কোথাও বসার স্থান না থাকায় নিচের একটি ভবনের সিঁড়িতেই দাঁড়ানো ছিলেন। এসেছিলেন পত্রিকাটির এমডি ফিরোজা মাহমুদ। প্রতিদিনের মতো সাংবাদিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই ছুটে এসেছিলেন। অনেকে গাড়িতে বসেই সবার সাথে কথা বলে চলে যান। নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, সব কিছুই তো পুড়ে গেছে, সার্ভার পুড়ে গেছে, আর্কাইভ নষ্ট হয়ে গেছে, এত বছরের রেকর্ডপত্র, কম্পিউটারসহ সব সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন আর দাঁড়ানোর মতো অবস্থাই নেই। তিনি বলেন, আমরা ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটে ছিলাম। এর মধ্যে ভাড়াসহ অফিস খরচা ছিল সাড়ে আট লাখ টাকা। এটা দেয়া সম্ভব ছিল না বলেই সব দেনাপাওনা মিটিয়ে একটি ছোট অফিস নিয়েছিলাম অন লাইনটি চালানোর জন্য। গত বৃহস্পতিবার দেনাপাওনা বুঝিয়ে দেয়া হয়। সব মালামাল প্যাকেট করা হচ্ছিল। এরই মধ্যে এই অগ্নিকাণ্ড। তিনি বলেন, ঘটনার ব্যাপারে তেজগাঁও থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।  সিটি এডিটর এম আব্দুল্লাহ বলেন, সবই এখন স্মৃতি। পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। এখন আর কিছুই বাকি নেই।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে সেখানে গিয়েছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি ঘুরে ঘুরে অফিসটি দেখেন। তিনি বলেন, যদি শত্রুতা করে কেউ আগুন না লাগায় তবে বলতে হবে সরকারি এই ভবনটি নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে। আর সে কারণেই বারবার আগুন লাগছে।
এ দিকে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে এনটিভি এবং আরটিভির পক্ষ থেকেও পৃথক দু’টি জিডি করা হয়েছে। এ দিকে, ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলেছে ক্ষয়ক্ষতি এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা না ইচ্ছে করেই আগুন লাগানো হয়েছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। আমার দেশ-এর কয়েকজন সাংবাদিক বলেছেন, তাদের ধারণা পরিকল্পিতভাবেই এই আগুন লাগানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.