ট্রাকচাপায় মা-মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু: নারায়ণগঞ্জে প্রতিবাদে গাড়িতে আগুন, সংঘর্ষ

নারায়ণগঞ্জে ট্রাকচাপায় মা ও মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় আহত হয়েছে অপর এক মেয়ে। নিহতরা হলেন শিরিন বেগম (২৮), তার মেয়ে জয়িতা (৬)। আহত হয়েছে অপর মেয়ে অর্পিতা (১১)। আহত অর্পিতাকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতদের বাড়ি শহরের খানপুর এলাকাতে। ঘটনাটি ঘটে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের মিশনপাড়া এলাকায়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ওই ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।  ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও পুলিশের লাঠি চার্জে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। নিহতদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শহরের চাষাঢ়ার বালুর মাঠ এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম সারোয়ারের স্ত্রী পিয়ারী আক্তার শিরিন দুই মেয়ে অর্পিতা ও জয়িতাকে নিয়ে বাপের বাড়ি খানপুর যাচ্ছিলেন। নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের মিশনপাড়া মোড়ে তাদের বহরকারী রিকশাটিকে পেছন থেকে একটি  ট্রাক (ঢাকা-মেট্রো ১১৫৬২৬) ধাক্কা দেয়। এতে রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে মা শিরিন ও মেয়ে জয়িতা টাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নির্মমভাবে মারা যায়। এবং বড় মেয়ে অর্পিতা ও রিকশাচালক আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ওই ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় বিক্ষুব্ধ লোকজন কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং সড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে জনতা পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে উভয়ে মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের এপিবিএন সদস্যসহ বেশ কয়েকজন পথচারী আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দু’দফার চেষ্টা চালিয়ে ট্রাকটির আগুন নিভাতে সক্ষম হয়। পরে গমবোঝাই ট্রাকটি সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রাক চালক মঈন (৩৫)কে আটক করে সদর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তার বাসা শহরের পাইকপাড়ার নয়াপাড়ায়। ঘাতক ট্রাকটির মালিক নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। এবং ট্রাকবোঝাই গম নিতাইগঞ্জের রফিক ট্রেডার্সে আনলোড হওয়ার কথা ছিল। নিহত শিরিনের বড় ভাই জানান, তার বড় ভাগ্নি অর্পিতা জেএসসি পরীক্ষার্থী আর ছোট ভাগ্নি জয়িতা শহরের ফিলোসফিয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। বোন শিরিন তার শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাদের বাসায় আসার পথে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মো. মঞ্জুৃর কাদের জানান, যদি নিহতের পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের না করেন, তবে পুলিশ বাদী হয়ে ঘাতক ট্রাকচালকের বিরুদ্ধে মামলা করবে।

No comments

Powered by Blogger.