রিক্তায় সিক্ত মুজিবুল

কাবিননামায় সই করলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও কনে হনুফা আক্তার রিক্তা। এবার দাম্পত্যজীবনে নববধূ রিক্তার প্রেমে জীবন সিক্ত করবেন রেলমন্ত্রী। বিয়ের দেনমোহর পাঁচ লাখ এক টাকা। আসরেই তা পরিশোধ করেন মন্ত্রী। ঠিক ঘড়ির কাঁটায় যখন ৩টা ১৭ মিনিট, তখনই কাবিননামায় স্বার করলেন বর রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামে কনের বাড়িতে ছিল সাজ সাজ রব। বরকে স্বাগত জানাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে তৈরি করা হয় গেট। দুপুরে মন্ত্রী আসার পরপরই শুরু হয় হইহুল্লোড়, ধাক্কাধাক্কি। এর মধ্য দিয়েই মন্ত্রী গিয়ে পড়েন শ্যালিকাদের সামনে। গেটের অপর প্রান্তে পৌঁছতে শ্যালিকাদের দিতে হয়েছে এক লাখ এক টাকা। বিয়েতে মুজিবুল হকের প থেকে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ৭০০ জন। আর কনেপরে লোকজনসহ প্রায় দেড় হাজার। দুই হাজার ২০০ লোকের খাবারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু নেতার বিয়ে বলে কথা। তাই উৎসুক অতিথির কমতি ছিল না। ফলে শেষ মুহূর্তে খাবারের ঘাটতি দেখা দেয়। অনেকেই খাবার পাননি। তবে এ নিয়ে কারো মন খারাপ ছিল না। বিয়ের মহাভোজের তালিকায় ছিল কাচ্চি বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, জালি কাবাব, বোরহানি, কোমল পানীয়, মিষ্টি, জর্দা ইত্যাদি। আর জামাই মুজিবুল হকের জন্য করা হয় বিশেষ খাবার। অন্য আয়োজনের পাশাপাশি করা হয় ১৬ কেজি ওজনের আস্ত খাসি। বিশাল আকারের ডিশে জামাইয়ের খাবার পরিবেশন করা হয় বেশ আয়োজন করে। চার পাশে ১০টি ইলিশ মাছ, ১০টি আস্ত মুরগির রোস্ট এবং মধ্যে ১৬ কেজি ওজনের খাসির রোস্ট। নানান পদের খাবার ও মিষ্টিও ছিল সেখানে।
মীরাখোলা গ্রামের কাজী সিদ্দিকুর রহমান এই বিয়ে পড়ান। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হাসেম চৌধুরী উকিল বাবার দায়িত্ব পালন করেন। মুজিব-রিক্তার বিয়ের সাী ছিলেন কিবরিয়া মজুমদার, খোকন রেজা ও ফজলুল করিম। তাদের মধ্যে কিবরিয়া বর এবং অন্য দুইজন কনে পরে।
বিয়েতে ভিআইপি যারা ছিলেন
 বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, সংসদ সদস্য আলী আশরাফ, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এমপি, তাজুল ইসলাম এমপি, সাবেক এমপি নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল, চট্টগ্রামের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
বরযাত্রীদের খোয়া গেল মোবাইল ফোন ও টাকা
এ দিকে ভিড়ের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ চুরি হয়। এ ছাড়া ১০-১৫ জন গণমাধ্যম কর্মীর মোবাইল ফোনও খোয়া যায় বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
সন্ধ্যা ৬টায় নববধূকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন রেলমন্ত্রী
বিয়ে শেষে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে সবার দোয়া নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ত্যাগ করেন বর রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। কনে হনুফা আক্তার রিক্তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। নববধূকে নিয়ে ঢাকায় রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক তার সরকারি বাসভবনে উঠবেন। মেয়ে রিক্তাকে গাড়িতে তুলে দেয়ার সময় মা জোছনা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কনের মা নবদম্পতির জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
কনের খালাতো ভাই লুৎফুর রেজা খোকন জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে মুজিবুল ও রিক্তার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। নবদম্পতিও সবার দোয়া কামনা করেন।
 বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে বর বেশে রওনা করে কুমিল্লার দাউদকান্দি ঈদগাহ মাঠে গতকাল জুমার নামাজ আদায় শেষে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন বর ও বরযাত্রী। ৩টায় স্থানীয় তালতলা বাজারে পৌঁছার পর বরযাত্রীদের সব গাড়ি পার্কিং করে শুধু বর নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে পৌঁছেন মীরাখোলা গ্রামে কনের পিত্রালয়ে। বেলা ৩টায় গাড়ি নিয়ে সরাসরি পৌঁছেন কনের পিত্রালয়ে। এ সময় প্রায় ৫০টিরও বেশি বিভিন্ন মডেলের গাড়িতে আসেন বরযাত্রী। কনের পরে ফুল ছড়ানিতে ফুলেল বৃষ্টিতে পরিণত হয় বিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক। এ সময় ব্যাপক আনন্দে সরগরম হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ বাহিনীসহ পরিবারের সদস্যদের।
পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জয়নাল আবেদীন জানান, এত লোকের ভিড়ে কে ভালো আর কে খারাপ খোঁজ করা সম্ভব নয়। তবে অনেকের মোবাইল ফোন, টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে তা সত্য।
পুলিশের গোয়ান্দা সূত্রে জানা যায়, বিয়ে বাড়ি থেকে ৪৪টি মোবাইল ফোন ও প্রায় ১০০ মানিব্যাগ চুরি হয়েছে।  চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোর্শেদ জানান, চুরির অভিযোগে দুইজনকে আটক করা হয়েছে।  বাবুর্চিরা জানান, বিয়েতে মাত্র এক হাজার ২০০ লোকের আয়োজন করা হয়। কিন্তু লোকসমাগম হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সন্তান ৬৭ বছর বয়সী রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক গতকাল নিজ জেলা চান্দিনার মীরাখোলা গ্রামের মরহুম হাবিব উল্লাহ মুন্সির কনিষ্ঠ মেয়েকে বিয়ে করেন।
>>সহিদ উল্লাহ মিয়াজী কুমিল্লা, হাবিবুর রহমান চৌধুরী সদর দণি ও রণবীর ঘোষ কিংকর চান্দিনা

No comments

Powered by Blogger.