রহস্যময় আগুনে পুড়ে ছাই আমার দেশ কার্যালয়

রহস্যময় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার কার্যালয়। সরকারের নির্দেশে  পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হওয়ার প্রায় দেড় বছরের মাথায় পত্রিকা কার্যালয় রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের আগ মুহূর্তে গতকাল শুক্রবার আগুন লেগে পুরো কার্যালয় ভস্মীভূত হয়। এ ঘটনায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) ভবনের ১১তলায় আমার দেশের কার্যালয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ২০টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে ওই ভবনে অবস্থিত দুই টিভি চ্যানেল এনটিভি ও আরটিভির কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানা গেছে। তবে সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে আরেকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সহযোগিতায় এনটিভি তাদের সম্প্রচারকার্যক্রম শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরটিভি বিএসইসি ভবনের স্টুডিও থেকে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) শেখ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বিএসইসি কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগে ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ভবনে আগুন লেগে এনটিভি, আরটিভি ও আমার দেশসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় পুড়ে যায়। মৃত্যু হয় তিনজনের। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন আজো আলোর মুখ দেখেনি।
গতকাল অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুসাদ্দেক আলী ফালু, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মোহাম্মাদ আলী আহমেদ খান, সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দসহ অনেকে। এ ছাড়া ওই ভবনের রাস্তার দুই পাশে ভিড় জমান উৎসুক জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার থাকায় ওই ভবনের অনেক অফিসই বন্ধ ছিল। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আগুন আগুন চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ভবনের অন্যান্য তলায় থাকা লোকজন দ্রুত লিফট ও সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান। খবর পেয়ে প্রথম দফায় ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে আরো পাঁচটি ইউনিট যোগ দেয়। বেলা ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময়ের মধ্যে আমার দেশ পত্রিকার অফিসের কম্পিউটার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি, চেয়ার টেবিল ও অফিসের অন্যান্য জিনিসপত্র পুড়ে যায়। এই ১১তলায় ল’ অফিস ব্যারিস্টার তানজিব আলম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ও সার্ভারনেট নামে একটি গার্মেন্ট এক্সেসরিজ সরবরাহের প্রতিষ্ঠান ছিল। অগ্নিকাণ্ডে এই দু’টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সার্ভারনেটের সব আসবাবপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে গেছে। এ ছাড়া আগুন লাগার সময় ওই ভবনে অবস্থিত এনটিভি ও আরটিভির সম্প্রচার চলছিল। বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চ্যানেল দু’টির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
দৈনিক আমার দেশের অফিস সহকারী আব্বাস আলী হাওলাদার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা অফিস পরিবর্তনের জন্য কয়েকটি এসি ও চেয়ার লিফটে নামিয়েছি। আরো মাল নামানোর প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তর-পূর্ব দিকের স্টোররুমে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। স্টোররুম তালাবদ্ধ ছিল। স্টোররুমের চাবি যার কাছে থাকে, তাকে ফোন করে ডেকে আনা হয়। পরে চাবি দিলে খুলে নিজেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিই।
ভবন থেকে নেমে আসা আমার দেশের একজন কর্মী জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা হঠাৎ কালো ধোঁয়া দেখতে পান। এরপরই তারা নিচে নেমে আসেন। তখন কার্যালয়ে আর কেউ ছিল না। এনটিভি ও আরটিভির কর্মীরাও আগুন লাগার পর নিচে নেমে আসেন। আগুন লাগার সময় ওই ভবনে একটি কর্মশালাও চলছিল। আগুন লাগার পর ওই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ও অতিথিরা দ্রুত নিচে নেমে যান।
আমার দেশের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাসির উদ্দীন শোয়েব জানান, দীর্ঘ দিন ধরে অফিস পরিবর্তনের কথা বলা হলেও বিএসইসি কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। গত বৃহস্পতিবার বিএসইসি কর্তৃপক্ষের সাথে আমার দেশ কর্তৃপক্ষের দেনা-পাওনা মিটিয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে গুলশানের নিকেতনে অফিস পরিবর্তনের কথা ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় সকালে ইলেকট্রিশিয়ান আহমদ আলী, পারভেজ, স্টোরকিপার মহসিন, ঝাড়–দার তরুণ দাস, স্টাফ আব্বাস আলীসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক অফিস স্থানান্তরের কাজ করছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্রমিকেরা স্টোররুমে ধোঁয়া দেখতে পান। প্রাথমিকভাবে তারা নিজেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন বলে জানান নাসির উদ্দীন শোয়েব। পত্রিকা স্থানান্তরের দিন আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা হতে পারে বলেও সন্দেহ করেন তিনি। পত্রিকাটির কম্পিউটারসহ যাবতীয় মালামাল পুড়ে গেছে বলেও জানান শোয়েব।
ওই তলায় পত্রিকার গোডাউন ও স্টোররুম ছিল। এ ছাড়া ১১তলায় ব্যারিস্টার তানজিম আলমের চেম্বারটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তবে ৯, ৮, ৭ তলায় এনটিভি ও ৬ তলায় আরটিভির কারো কোনো তি হয়নি। চ্যানেলের কর্মীরা নিরাপদে বের হয়ে যান ভবন থেকে। তবে আর্থ স্টেশনের তি হওয়ায় চ্যানেল দু’টির সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।
আমার দেশের রিপোর্টার মাহমুদা ডলি জানান, আমার দেশ পত্রিকার অফিস নিকেতনে স্থানান্তর করার কথা ছিল। এ জন্য অফিসের মালপত্র নামানো হচ্ছিল। বেলা সোয়া ১১টার পর অফিসের সিকিউরিটি গার্ড মাসুম তাকে ফোনে অগ্নিকাণ্ডের কথা জানান। আমার দেশ পত্রিকার সার্ভার ও আর্কাইভ সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
মাহমুদা ডলি অভিযোগ করেন, অফিস পরিবর্তনের মুহূর্তে এমন ঘটনা যে পরিকল্পিত তা বোঝা যাচ্ছে। সরকারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আমার দেশ অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে। সরকার আগে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করেছে, এখন অফিসে আগুন দিয়ে এর কবর রচনা করল।
আমার দেশের টেকনিশিয়ান আহমদ আলী জানান, অফিসের চার কর্মী ও ছয় শ্রমিক নিয়ে অফিস স্থানান্তরের কাজ করছিলেন তিনি। এ সময় অফিসের ৩৫টি এসির মধ্যে প্রথমে আটটি এসি নিচে রেখে ওপরে উঠেই পূর্ব কর্নারে স্টোররুমে ধোঁয়া উঠতে দেখেন। এরপর বৈদ্যুতিক সুইচ বন্ধ করে নিজেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তারা দ্রুত নেমে যান।
তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। নির্দিষ্ট করে ক্ষতির পরিমাণও জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দু’টি সিঁড়ি লাগিয়ে ১১ তলায় পানি দিচ্ছেন। একপর্যায়ে আগুনের তেজ কমে এলেও ভবনের ভেতরে প্রচুর ধোঁয়া জমে যায়। ধোঁয়া বের করতে ভবনের বেশ কিছু জানালার কাচ ভেঙে ফেলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বেলা ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নির্বাপন করতে বিকেল ৪টা গড়িয়ে যায়। বিএসইসি ভবন থেকে আগুনের হলকা ও ধোঁয়া আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে আশপাশের ভবনের অনেকেও নিচে নেমে আসেন। আশপাশের ভবনে পানিও ছিটানো হয়। ভবন ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। পরে র‌্যাব-পুলিশ জনতাকে নির্দিষ্ট দূরত্বে সরিয়ে দেয়। ভবন থেকে ভেঙে পড়া কাচের টুকরো লেগে ঘটনাস্থলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রতিবেদক মারুফ আল মুহিত আহত হন। বিকেলে ১১ তলায় আমার দেশ অফিসে ঢুকে দেখা যায় কয়েকটি কম্পিউটার ছাড়া পুরো অফিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তদন্ত কমিটি গঠন : অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) শেখ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোনের উপপরিচালক মাসুদুর রহমানকে, বাকি তিনজনকে সদস্য করা হয়েছে।
অন্য দিকে বিএসইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসেন চৌধুরী জানান, সংস্থার পরিচালক (অর্থ) সৈয়দ মোজাম্মেল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন যারা : অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ভবনে ২০০৭ সালের অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এবার দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করা হবে। তদন্তে নাশকতার অভিযোগ প্রমাণ হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্ত্রী জানান, ওই ভবনের সিঁড়িও ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। আগুনের ঘটনা দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি। মন্ত্রী ভবনের তিগ্রস্ত অংশ ঘুরে দেখেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি তদন্তাধীন। তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রহস্যজনক : মির্জা ফখরুল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল পুড়ে যাওয়া আমার দেশ কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এই ভবনে এর আগের অগ্নিকাণ্ডের সঠিক তদন্ত হয়নি বলে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। এবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। এটা নাশকতা নয় তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের গণতন্ত্র রায় যে সংবাদমাধ্যমটি সবচেয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে আমার দেশ অন্যতম। কিন্তু এ পত্রিকাটিকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সম্পাদককে জেলে রাখা হয়েছে। তারপরেও পত্রিকাটির অনলাইন মাধ্যমটি চালু ছিল। শনিবার (আজ) পত্রিকাটির অফিস স্থানান্তরের কথা। এর মধ্যে পত্রিকাটির অফিসে অগ্নিকাণ্ড রহস্যজনক। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের পর এবার আবার বিএসইসি ভবনে অগ্নিকাণ্ড দেশের স্বাধীন গণমাধ্যমে ওপর বিরাট আঘাত। কারণ এ ভবনে আরটিভি, এনটিভি, আমার দেশের মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যগুলোর অফিস রয়েছে। ২০০৭ সালের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এবারের এ অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা উচিত এবং এর পেছনে কেউ জড়িত কি না তা বের করার দাবি জানাচ্ছি।
সরকারি নাশকতার শিকার : বিএনপি
আমার দেশ পত্রিকা, এনটিভি ও আরটিভি সরকারি নাশকতার শিকার বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আমার দেশ কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সরকারের এজেন্টরাই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সরকার বিরোধী দল ধ্বংসের যে পাঁয়তারা করছে আমার দেশে আগুন সে পরিকল্পনারই অংশ। নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। রিজভী এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
এনটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আলী ফালু বলেন, বারবারই এ ভবনে আগুন লাগে, আর আমি বারবারই তিগ্রস্ত হই। তদন্ত হয় কিন্তু রিপোর্ট পাই না। তদন্ত কী হয় তা জানা যায় না। যে কারণে এটা হয়েছে, তা শনাক্ত করতে হবে। এটা যেন ফের না ঘটে। ওই ভবন থেকে না হলেও বিকল্প ব্যবস্থায় আজকেই (গতকাল) এনটিভির সম্প্রচারের কাজ শুরু করার কথা জানান তিনি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান জানান, এই ভবনে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ছিল না। এ ছাড়া ভবনটি খুবই অপরিচ্ছন। যেখানে-সেখানে কাগজপত্র ও সিগারেটের টুকরো পড়ে থাকে। আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য এসবও একটি কারণ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইলেকট্রনিক ডিভাইস স্থানান্তরের সময় হয়তো শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ওই ভবনের অগ্নিকাণ্ডের তদন্তের রিপোর্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটি জনসমক্ষে প্রচার করা হয়নি।
জামায়াতের উদ্বেগ : বিএসইসি ভবনের ১১ তলায় অবস্থিত আমার দেশ পত্রিকা অফিসসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অফিসে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে আমার দেশ পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে গেছে। এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো রহস্য আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে সরকার আমার দেশ পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করবে এবং রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির বার্তা সম্পাদক আখতার হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। ওই সময় আমি অফিসেই  ছিলাম। সে দিনকার ভয়াবহ দৃশ্য মনে হলে এখনো আঁতকে উঠতে হয়। সেই আগুন কিভাবে লেগেছিল তা আজো জানতে পারিনি। এরপর থেকেই ভবনের বিভিন্ন ফোরে মাঝে মধ্যে আগুন আতঙ্কের কথা ছড়িয়ে পড়ে। এতে স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা আত্মীয়স্বজনেরা থাকেন আতঙ্কে। ওই একই ভবনে আবারো আগুন লেগেছে বলে যখন শুনি তখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। বারবার অগ্নিকাণ্ডে বিল্ডিংয়ের কী অবস্থা তা বুয়েটের প্রকৌশলীদের দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। কারণ এমনিতেই পাঁচ মিনিট ভবনে বিদ্যুৎ না থাকলে ভুতুড়ে পরিবেশ নেমে আসে।

No comments

Powered by Blogger.