তরুণীর অশ্লীল ফুটেজ জৈন্তাপুরে তোলপাড়

‘মেয়ের ইজ্জত রক্ষায় সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। বারবার বলেছি, মোবাইলে আমার মেয়ের বিবস্ত্র ছবি রেখে দেয়া হয়েছে। তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মোবাইলে মোবাইলে। এমনকি ইন্টারনেটেও। কিন্তু তারা কান দেননি। বরং কালক্ষেপণ করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়। শেষে বাধ্য হয়ে পুলিশের আশ্রয় নিয়েছি।’ ঘটনার ৫ মাসের মাথায় গতকাল মামলা করার পর সিলেটের জৈন্তাপুরের সীমা রানী দাস সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান। তার বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের ডেমা গ্রামে। কলেজপড়ুয়া তরুণীকে নিয়ে তিনি এখন পড়েছেন বিপাকে। সিলেটের স্বনামধন্য ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হয়েও থাকতে হচ্ছে গৃহবন্দি হয়ে। বখাটে দুই যুবক তার বিবস্ত্র ছবি ছড়িয়ে দিয়েছে মোবাইলে ও ইন্টারনেটে। এ কারণে বাইরে বের হতে পারছে না তরুণীটি। ঘটনার স্থান সিলেটের লালাখালে। জৈন্তাপুর উপজেলার ডেমা গ্রামের গোবিন্দ দাস ও সীমা রানী দাসের মেয়ে সিলেটের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী। জৈন্তাপুরের একটি স্কুলের খ-কালীন শিক্ষকও সে। চলতি বছরের ১৪ই এপ্রিল ওই তরুণী তার ভাইকে নিয়ে লালাখাট এলাকায় বেড়াতে আসে। বেড়ানোর একপর্যায়ে তেলিজুড়ী গ্রামের ইমরান (২৮) ও জসিম উদ্দিনের (২৬) সঙ্গে তাদের দেখা হয়। একই এলাকায় হওয়ায় তাদের সঙ্গে কথাও হয়। এক পর্যায়ে সঙ্গে থাকা ভাই সুজন দাসকে নিয়ে জসিমউদ্দিন অন্য স্থানে সরে যায়। এ সুযোগে ওই তরুণীকে ঝাপটে ধরে ইমরান। সে ওই তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে মেয়েটি চিৎকার করতে চাইলে মোবাইল ফোনে তারা বিবস্ত্র ছবি ও ফুটেজ তোলা হয়। এর পরও ওই তরুণী চিৎকার শুরু করলে তার ভাই সুজন দাস এগিয়ে আসে। পরে সে গ্রামে ফিরে তার মাকে ঘটনাটি জানায়। তরুণীর মা গ্রামের মুরব্বিদের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে সামাজিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চালানো হয়। শেষে বিচার বসেই ইমরানের মোবাইল ফোন থেকে তরুণীর বিবস্ত্র ছবি মুছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে ইমরান ও জসীম সায় দিলেও তারা ওই তরুণীর বিবস্ত্র ছবি মোবাইল থেকে মোছেনি। বরং ওই ছবি ইন্টারনেট এবং মোবাইলে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তরুণীকে বশে আনার চেষ্টা করে। এসব বিষয়ও তরুণীর মা স্থানীয় সমাজপতিদের কাছে বলেছেন। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। অবশেষে মেয়ের ইজ্জত রক্ষার্থে সীমা রানী দাস নিজেই বাদী হয়ে জৈন্তাপুর থানায় মামলা করেছেন। (মামলা নং-১(১১) ২০১৪)। মামলার আসামি ইমরান (২৮) ও জসিমউদ্দিন (২৬)। গত ২৮শে অক্টোবর থানায় অভিযোগ দেয়ার চার দিন পর গতকাল মামলাটি রেকর্ড করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ‘২০০৬ (সংশোধিত-২০১৩)-এর ৫৭(২)’ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(ক) ধারায় ২ উপধারায় মামলাটি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে সীমা রানী দাস উল্লেখ করেছেন, ১৪ই এপ্রিল জৈন্তাপুর থানার দরবস্ত ইউনিয়নের ডেমা গ্রামের ভিকটিম ওই কলেজছাত্রী তার চাচাতো ভাই সুজন দাসকে সঙ্গে নিয়ে পর্যটন স্পট লালাখালে বেড়াতে যান। সেখানে ওই দু’জন ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং তার বিবস্ত্র চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করে। তিনি এজাহারে জানান, এ ঘটনার পর পারিবারিকভাবে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ধারণ করা বিবস্ত্র চিত্র মুছে দেয়া হবে- এ আশ্বাসের ভিত্তিতে ভিকটিমের পরিবার প্রথম দিকে থানায় মামলা করেনি। কিন্তু গত ২৭শে অক্টোবর ভিকটিমের পরিবার জানতে পারে ধারণ করা ওই বিবস্ত্র চিত্র ডিলিট করা হয়নি, ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভিকটিমের পরিবার একজন আইনজীবী ধরে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস’র (এইচআরসিবিএম) সহযোগিতায় ২৮শে অক্টোবর জৈন্তাপুর থানায় ইমরান ও জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার জন্য অভিযোগ দেন। অভিযোগ দেয়ার ৪ দিন পর শনিবার থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জৈন্তাপুর থানার এসআই স্বপন চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, তদন্তে সত্যতা পাওয়া পর মামলাটি রেকর্ড করা হয়। সীমা রানী দাস জানিয়েছেন, সমাজপতিদের ওপর ভরসা করে মামলা করিনি। অনেক চেষ্টা করেছি মেয়ের ইজ্জত রক্ষা করতে। কিন্তু বখাটে ইমরান ও জসীম মেয়ের বিবস্ত্র ছবি ছড়িয়ে দিয়েছে মোবাইলে মোবাইলে ও ইন্টারেটে। এ কারণে শেষে বাধ্য হয়ে থানায় এজাহার দিই। তিনি বলেন, আমার মেয়ের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ায় আমরা মানসম্মান হারিয়েছি। এখন সুবিচার চাই। ভিকটিমকে আইনগত সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এইচআরসিবিএম’র সাধারণ সম্পাদক রাকেশ রায়। তিনি জানান, তরুণীটি অসহায় হয়ে পড়েছে। তাকে নিরাপত্তা ও সুবিচার ফিরিয়ে দেয়া সমাজের সবার দায়িত্ব।

No comments

Powered by Blogger.