বুরকিনা ফাসোতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব

ব্লেইস কমপাওরে, হনরে ত্রাওরে ও আইজ্যাক জিদা
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্টের গার্ড বাহিনীর দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা কর্নেল আইজ্যাক জিদা গতকাল শনিবার নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পদত্যাগকারী প্রেসিডেন্ট ব্লেইস কমপাওরে ও সেনাপ্রধান হনরে ত্রাওরে ‘নিরাপদে’ আছেন। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, কমপাওরে আইভরিকোস্টে গেছেন। খবর বিবিসি, আল-জাজিরা ও এএফপির। বুরকিনা ফাসোর জাতীয় টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে গতকাল শনিবার কর্নেল জিদার রেকর্ড করা বক্তৃতা প্রচার করা হয়। এতে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে আমি অন্তর্বর্তী প্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছি...।
একটি রাষ্ট্রের “দায়িত্বের ধারাবাহিকতা” এবং “সুশৃঙ্খল ও গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তর” নিশ্চিত করতেই আমি দায়িত্ব গ্রহণ করছি।’কর্নেল জিদার এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল হনরে ত্রাওরে দাবি করেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ব্লেইস কমপাওরের অনুসারী বলে পরিচিত ত্রাওরে ৯০ দিনের মধ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচনের কথা ঘোষণা করলেও জিদা বলেছেন, নির্বাচনের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। এর আগে কমপাওরে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের অবস্থা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেওয়া কর্নেল জিদা গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট ব্লেইস কমপাওরে ও সেনাপ্রধান হনরে নিরাপদে আছেন। তবে তাঁরা কোথায় ও কীভাবে আছেন, তা স্পষ্ট করেননি। এর পর গতকাল সন্ধ্যায় বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, কমপাওরেকে আইভরিকোস্টে দেখা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে বিশদ কিছু জানা যায়নি। খবরে শুধু বলা হয়, আইভরিকোস্টের বিলাসবহুল একটি হোটেলে অবস্থান করছেন কমপাওরে। কিন্তু এ বিষয়ে আইভরিকোস্ট বা বুরকিনা ফাসোর সরকারি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরাসি একজন কূটনীতিক বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট শুক্রবার রাজধানী ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ ঘানার সীমান্তবর্তী পো শহরের দিকে গেছেন।
২৭ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট কমপাওরে প্রবল গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন। বুরকিনা ফাসোর বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী গত বৃহস্পতিবারই জরুরি অবস্থা জারি করে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র বুরকিনা ফাসোতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, ‘আমরা সামরিক হস্তক্ষেপ কিংবা চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টার নিন্দা জানাই।’ ব্লেইস কমপাওরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে গত বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু ভোট শুরুর আগেই তাঁর পদত্যাগের দাবিতে হাজারো বিক্ষোভকারী রাজপথে নামে। একপর্যায়ে তারা পার্লামেন্ট ভবনে আগুন দেয়। বাধ্য হয়ে ভোট বাতিল করে গত শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন কমপাওরে।

No comments

Powered by Blogger.