বিমান কি এভাবেই চলবে?

পত্রিকার শিরোনাম থেকে বিমান অব্যাহতি পাচ্ছে না কিছুতেই। নিয়মিতভাবেই প্রকাশিত হচ্ছে এ সংস্থার অনিয়ম-দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা-অপচয়ের খবর। মাত্র ৩-৪ দিন আগে এই সম্পাদকীয়তেই মিসর থেকে দুটি বিমান ভাড়া নিয়ে গত ৯ মাসে ২১০ কোটি টাকা গচ্চা দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছিলাম আমরা। আজ লিখতে হচ্ছে সেই মিসর থেকেই আরও দুটি এয়ারক্রাফট লিজ নেয়ার কথা। অভ্যন্তরীণ রুট পরিচালনার অজুহাতে বিমান দুটি পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছে, যেগুলো আগামী মাসেই বিমানবহরে যুক্ত হবে। এই দুটি বিমানের জন্য বাংলাদেশ বিমানকে প্রায় চারশ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে, অথচ সমপরিমাণ টাকায়ই চারটি এয়ারক্রাফট কেনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আমরা প্রশ্ন তুলেছিলাম, অব্যাহতভাবে বিমানের অপচয়ের পেছনের রহস্য কী? অপচয়ের টাকার ভাগ কি অন্য কোথাও যাচ্ছে, নাকি জাতীয় এই এয়ারলাইন্সকে ধ্বংস করার কোনো ষড়যন্ত্র চলছে অলক্ষ্যে? এটা এখন ওপেন-সিক্রেট একটি ব্যাপার যে, একটি পরাক্রমশালী সিন্ডিকেট বিমানে সক্রিয় রয়েছে, যার সদস্যরা সংস্থাটিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে নামিয়ে গোষ্ঠী সম্পদে পরিণত করেছে। নিজস্ব এয়ারক্রাফট বসিয়ে রেখে অথবা সাশ্রয়ী মূল্যে বিমান ক্রয় না করে যখন উচ্চ হারে বিদেশী এয়ারলাইন্স থেকে বিমান ভাড়া নেয়া হয়, তখন বুঝতে হবে কোথাও কোনো ষড়যন্ত্র চলছে।
বিমান কর্তৃপক্ষ একদিকে সংস্থাটিকে লোকসানি সংস্থায় পরিণত করেছে, অন্যদিকে তাদের অব্যবস্থাপনায় বিদেশীদের সবচেয়ে বড় প্রবেশদ্বার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এশিয়ার নিকৃষ্ট বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় নবম স্থানে চলে গেছে। জরিপটি করা হয়েছিল ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো সুবিধা ও সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের মতামতের ভিত্তিতে। এই কলংক তিলক কারা বসালো আমাদের কপালে? তাদের কি জবাবদিহিতা বলতে কিছু থাকতে নেই? বিমানমন্ত্রীই বা কী করছেন? তিনি দীর্ঘদিন বাম রাজনীতি করেছেন দেশকে সমাজতান্ত্রিক আদলে গড়ার লক্ষ্যে। দেশের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে যিনি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না, তিনি সমগ্র দেশ পরিচালনার কথা ভেবেছেন কীভাবে? এ দেশে কি সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে? মন্ত্রী-সচিব-চেয়ারম্যান-ব্যবস্থাপনা পরিচালক- এসব পদের তাহলে দরকার কী? বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে আছে। কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। এখন নাকি বলা হচ্ছে, ভাড়া দ্বিগুণ করা ছাড়া এ রুটে বিমানের লাভ হবে না। ভাড়া দ্বিগুণ করে আগামী এক মাসের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুট আবার সক্রিয় করা হবে বলে জানা গেছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজার ধরতে হলে ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে সেবার মানও বাড়াতে হবে। তা না হলে লোকসানের হাত থেকে বাঁচা যাবে না।
বস্তুত বিমানের যে অসুখ, তার মলমি সমাধান হবে না। দরকার সার্জারি। আগাপাশতলা ঢেলে সাজাতে হবে একে। বিমানের দুর্নীতির একটি বড় খাত ক্রয় ও ভাড়া। এই দুই খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অপরিপক্ব চিন্তার সিদ্ধান্ত থেকেও রক্ষা করতে হবে বিমানকে। সবচেয়ে বড় কথা, অপচয় রোধ করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে অপচয় যোগ হলে একটি প্রতিষ্ঠান কতকাল টিকে থাকতে পারে?

No comments

Powered by Blogger.