অবর্ণনীয় দুর্ভোগ- মধ্যরাতে কাটল আঁধার

টানা ১২ ঘণ্টার অবর্ণনীয় দুর্ভোগের পর দেশের অধিকাংশ এলাকার আঁধার কেটেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, রাত ১২টার পর রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকাসহ ৩০টি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে উৎপাদন কম থাকায় রেশনিং ও লোডশেডিং করে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। 
রাত ১২টা পর্যন্ত যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে সেগুলো হল- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ফেনী, কুষ্টিয়া, নাটোর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নওগাঁ, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, রংপুর, মাগুরা, বগুড়া, রাজশাহী, নড়াইল, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, বান্দরবান, জামালপুর ও বাগেরহাট।

বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী, রাত ২টার মধ্যে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা। তবে উৎপাদনের তুলনায় ঘাটতি বেশি থাকায় কিছু কিছু এলাকায় লোডশেডিং ও রেশনিং করা হবে।
এদিকে রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর, উত্তরা, মতিঝিল, আজিমপুর, শ্যামপুর, জুরাইন, পোস্তগোলা, টোলারবাগ বাসাবো, মুগদা, মিরপুর, বসুন্ধরা, যমুনা ফিউচার পার্ক, উত্তর বাড্ডা, রামপুরা, বনানী, ফার্মগেট, ধানমণ্ডিসহ অর্ধেক এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিতরণ লাইন নষ্ট থাকায় রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কারণ শনিবার বিকালে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রিকভারি করে রাজধানীর বিতরণ লাইনে সরবরাহ করার ঘণ্টাখানেক পর থেকে বিতরণ লাইনের বিভিন্ন এলাকায় ট্রিপ শুরু হয়। এরপর বাধ্য হয়ে রাজধানীর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং তাৎক্ষণিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে ডেকে অবিলম্বে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয় সেদিকে করা নজর রাখার কথা বলেন।
যে কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় : বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারত বাংলাদেশকে যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে আসছিল তা এতদিন স্বাভাবিকভাবে আসছিল। কিন্তু শনিবার সকালে হঠাৎ ভারত বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এ কারণে জাতীয় গ্রিডে এই বিপর্যয় হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের বেশ ক’জন বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ যুগান্তরকে জানান, মোট সঞ্চালন লাইনের ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ যদি গ্রিডলাইনে না থাকে কিংবা হঠাৎ করে কমে যায়, তাহলে গ্রিডের চাহিদায় ধস নামবে। আর সরাসরি এর প্রভাব গিয়ে পড়বে জাতীয় গ্রিডে। অনেকে ধারণা করছেন, ভারত থেকে আসা বিদ্যুতের ভোল্টেজ চাহিদার তুলনায় অনেক কম ছিল। যার কারণেই মূলত এই বিপর্যয় ঘটেছে।
তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন তার চেয়ারম্যান আর এন নায়েক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের লাইনে কোনো সমস্যা হয়নি।
তিনি জানান, শনিবার ভারতীয় সময় ১১টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১১টায়) একটি লাইন মিনিটখানেকের জন্য ‘ট্রিপ’ করেছিল বা বসে গিয়েছিল। কিন্তু মিনিটখানেকের মধ্যেই দ্বিতীয় আরেকটি লাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। ভারতীয় অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত আছে।
পিজিসিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ভারত থেকে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে। ভারতের অংশে এ বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে রয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড অব ইন্ডিয়া (পিজিআই) আর বাংলাদেশ অংশে বিদ্যুতের সঞ্চালনের দায়িত্বে রয়েছে পিজিসিবি।
৪শ’ কেভি সঞ্চালন লাইনের পাশাপাশি ভারতের বহরমপুর ও বাংলাদেশের ভেড়ামারায় এইচভিডিসি (হাই ভোল্টেজ ডিরেক্ট কারেন্ট) বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতের বহরমপুর হয়ে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে এ সঞ্চালন লাইনটি জাতীয় সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
পিজিসিবি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আসছিল। সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গোটা বাংলাদেশের জাতীয় সঞ্চালন লাইন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। সঞ্চালন লাইন বিপর্যয় হওয়ার কারণে সারা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়। এর মেরামত কাজ চলার মধ্যেই বিকালে আবার গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দিলে সঙ্কট দীর্ঘায়িত হয়।
শনিবার দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। মেরামতের পর বিকালে ৭০০ মেগাওয়াটের মতো সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল। রাত ১২টায় সেটি বেড়ে ১৮শ’ মেগাওয়াটে দাঁড়ায়।
অন্ধকারে সারা দেশ : এদিকে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের পর সকাল থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সারা দেশ। শনিবার জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে কারিগরি ত্র“টি দেখা দিলে সারা দেশ একযোগে এ ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়ে। দিনব্যাপী বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শিল্পাঞ্চলগুলোতে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কেন্দ্রগুলোতে বিকল্প ব্যবস্থায় কাজ চালানো হয়।
সাধারণ মানুষের ভরসা ছিল জেনারেটর এবং আইপিএস। কিন্তু বিকালের পর থেকে সেগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে। ফলে সন্ধ্যার পর অন্ধকার গ্রাস করে পুরো দেশ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপুরের আগে থেকে মানুষের দুর্ভোগ শুরু  হয়। সন্ধ্যার পর তা  চরমে পৌঁছে। দিনভর বিদ্যুৎ না থাকায় পানির পাম্পগুলো পূর্ণ শক্তিতে চালানো যায়নি। ফলে ঢাকায় অন্ধকারের সঙ্গে পানি এবং গ্যাস সংকট যোগ হয়েছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে চার্জ না থাকায় বিকালের পর থেকে দেশের অধিকাংশ মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক নেমে আসে। বন্ধ হয়ে যায় সরকারি-বেসরকারি সব টেলিভিশন সংস্থা। খবরের জন্য গ্রামের সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে সংবাদপত্র কার্যালয়ে টেলিফোন করতে দেখা গেছে।
কুষ্টিয়া থেকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, বেলা ১১টা ২৯ মিনিটে ভেড়ামারা উপজেলার  ষোলদাগ এলাকায় জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে ত্র“টি দেখা দেয়ার পর ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়। ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সরবরাহ লাইনের সংযোগস্থলে ত্র“টিটি  দেখা দেয়। এতে সারা দেশ একসঙ্গে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এটা সাবোটাজ কিনা সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা এ ধরনের কোনো আশংকা করছি না।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেলা ১১টা ২৭ মিনিটের সময় হঠাৎ করেই ভেড়ামারার সাবস্টেশনে বিকট শব্দের পর বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। মুহূর্তে জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পুরো দেশ। এ সময় সারা দেশে উৎপাদনে থাকা সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রও একযোগে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ধস নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। জাতীয় গ্রিডলাইন ফেল করায় সারা দেশে দেখা দেয় চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয়।
দুপুরে বিকল্প ব্যবস্থায় রাজধানীতে ১শ’ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ এনে গুরুত্বপূর্ণ ভবন, কূটনৈতিক জোনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও সঞ্চালন লাইন ও ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে ঘণ্টাখানেক চলার পর আবারও ট্রিপ করে সঞ্চালন লাইন। যার কারণে রাজধানীসহ দেশের ৯৫ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। সন্ধ্যার দিকে ঢাকাসহ দেশের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার পর পুরো দেশে নেমে আসে বিভীষিকাময় অন্ধকার। আতংকিত হয়ে পড়ে দেশবাসী। রাস্তাঘাট থেকে যানবাহন শূন্য হয়ে পড়ে।  সারা দেশ থেকে গ্রাহকরা যুগান্তরসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় টেলিফোন করে কখন বিদ্যুৎ আসবে তা জানতে চান। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের খবরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীসহ বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ও পিডিবি, পিজিসিবিসহ বিভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্রের শীর্ষ কর্তারা ছুটে যান রাজধানীর আফতাবনগরের ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারে (এনএলডিসি)। এখানে তারা সম্মিলিতভাবে বিদ্যুৎ চালুর কাজ শুরু করেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের খোঁজখবর নেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে দেশের বাইরে বিশ্ব মিডিয়াতেও ব্যাপক আলোড়ন উঠেছে। বিবিসি, সিএনএন, এনডিটিবি, চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের টেলিভিশন ও অনলাইনে এই খবর ফলাও করে প্রচার করে। এসব খবরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির কথাও উল্লেখ করা হয়।
বিকালে বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু মেরামতের মধ্যেই পুনরায় বিপর্যয় দেখা দিলে তা আর হয়নি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা দ্রুত গ্রিডলাইন মেরামত করতে গিয়েছিলেন। ৭০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত রিকভারও করেছিলেন। এরই মধ্যে গ্রিড আবার ফেল করে। দ্রুত এগোনোর কারণে হয়তো সমস্যা হয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. আহমেদ কায়কাউসকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম-আল-বেরুনি জানান, ৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বিকাল ৩টার দিকে সিলেট বিভাগ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির আওতায় (পিজিসিবি) ৭টি সাবস্টেশন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জের শাহজিবাজার, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, নগরীর কুমারগাঁও এবং সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় অবস্থিত সাবস্টেশনগুলো আস্তে আস্তে চালু করা সম্ভব হয়েছে। এ কারণে সিলেটের মানুষ বিদ্যুৎ দুর্ভোগ থেকে কিছুটা রেহাই পেয়েছেন। অপরদিকে ৭ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করে। এ কারণে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেছে। 
পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ না থাকায় মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যায় আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নয়টি ইউনিটে উৎপাদন।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি বিভাগের পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান জানান,  ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ত্র“টির কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। এরপরই দুপুর ১২টার দিকে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬টি ও রেন্টালের ৩টি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী এবিএম মিজানুর রহমান ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের নির্বাহী এবং আবাসিক প্রকৌশলী সৈয়দ আবু হেনা মোস্তফাও প্রায় একই সময় তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যেও ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিনটি ইপিজেডে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তারা ঢাকা ইপিজেড এবং চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেডে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের ব্যবস্থাপক আহসান কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, চট্টগ্রামে দুটি ইপিজেড মিলে ১৭০টি কারখানা রয়েছে। নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকায় সেখানে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। 
ভেড়ামারা প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ৫০০ মেগাওয়াট হাই ভোল্টেজ ব্যাক টু ব্যাক ভেড়ামারার সাবস্টেশন বিকল হয়ে পড়ায় সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়ার সময় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ ছিল। পরে ঢাকা থেকে কেন্দ্রটি চালু করার নির্দেশ দেয়া হলে আমরা চালু করি। বর্তমানে ৩নং ইউনিট চলছে। কিন্তু কোনোভাবেই জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না।
ভেড়ামারা সাবস্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, সকাল থেকেই স্বাভাবিক অবস্থায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি চলছিল। শুক্রবারও ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। কিন্তু শনিবার হঠাৎ করেই ১১টা ২৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের সময় এই সাবস্টেশনে টেকনিক্যাল ক্রটি দেখা দেয়। এ সময় লাইন বিকল হয়ে পড়ে। সারা দেশের সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রও একযোগে বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি জানান, জাতীয় গ্রিডে ভারতীয় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় স্থাপনের জন্য নিরলস কাজ চলছে। ভারতের বহরামপুরে সঙ্গে সংযোগ লাইন পরীক্ষা করে ত্র“টিগুলোর সমাধান করে বিকাল ৪টা থেকে পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হয়।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, ভারতের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় আমদানিকৃত বিদ্যুৎ আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ২ লাখ ৩০ হাজার ভোল্টেজ। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ভোল্টেজ না পাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে ভেড়ামারার সাবস্টেশন। তখন থেকেই জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ভারতীয় বিদ্যুৎ। এ সময় অটোমেটিক কায়দায় বাংলাদেশের সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রই বন্ধ হয়ে যায়। অপর একটি সূত্র বলেছে, ভারতীয় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের সচল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও এখন অচল হয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.