পুলিশের ‘রাবার কার্টিজ’ রপ্তানিতে ইতালির নিষেধাজ্ঞা by দীন ইসলাম

১২ বোর শটগানের ‘রাবার কার্টিজ’ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটি বাংলাদেশে রাবার কার্টিজ রপ্তানির জন্য ‘এক্সপোর্ট লাইসেন্স’ দিচ্ছে না। এ বিষয়টি রাবার কার্টিজ সরবরাহের স্থানীয় এজেন্ট নিউ ভিক্টর লিমিটেড পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। তাই যুক্তরাজ্যের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোন দেশ পুলিশের গোলাবারুদ রপ্তানিতে নেতিবাচক মনোভাব জানিয়ে দিয়েছে। ফলে ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপটেনস টেস্ট (ফ্যাট)-এর জন্য সরকারি আদেশ জারি, টিকিট কনফার্ম ও আবাসন ঠিকঠাক থাকলেও ইতালি সরকারের গ্রিন সিগন্যাল না মেলায় বাংলাদেশ পুলিশের তিন সদস্যের টিম শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করেছে। ‘রাবার কার্টিজ’ রপ্তানি সংক্রান্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ চিঠি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের আইনশৃঙ্খলা কাজে সচরাচর ব্যবহার করা রাবার বুলেটে একটি ছোট সাইজের গুলি থাকে। কিন্তু কার্যাদেশ দেয়া উন্নতমানের রাবার কার্টিজের মধ্যে ৬টি গুলি থাকে। শটগানে কার্টিজটি ভরে ফায়ার করা মাত্র ছয়টি গুলি এক সঙ্গে বের হয়। পুলিশের কাছে এ কার্টিজের মজুত কমে যাওয়ায় গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিন লাখ রাবার কার্টিজ কেনার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। প্রতিটি রাবার কার্টিজ কিনতে বাংলাদেশী টাকায় ৪৮ দশমিক ৫০ টাকা লাগছে। ওই হিসাবে তিন লাখ রাবার কার্টিজ কেনার জন্য এক কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ৮৫৮ দশমিক ৯০ টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। তবে ইতালি সরকারের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বিপত্তিতে পড়েছে সরকার। পুলিশের আইজি হাছান মাহমুদ খন্দকার মানবজমিনকে বলেন, আপনি ব্যারিস্টার হারুনুর রশীদের সঙ্গে কথা বলুন। তিনি আপনাকে বিষয়টি সম্পর্কে জানাতে পারবেন। সূত্র জানায়, হরতালসহ বিভিন্ন গোলযোগে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য গত বছরের ২৪শে অক্টোবর তিন লাখ ১২ বোর শটগানের রাবার কার্টিজ কিনতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পুলিশ সদর দপ্তর। ৯ই ডিসেম্বর দরপত্র জমা দেয়ার সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ে নিউ ভিক্টর লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। টেকনিক্যাল কমিটির যাচাই বাছাই শেষে ২০১৪ সালের ২৩শে মার্চ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে নোটিফিকেশন অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। এর ভিত্তিতে একই বছরের ১৭ই এপ্রিল চুক্তিপত্র সই করে ইতালির ‘সিমাড এসপিএ’ কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট নিউ ভিক্টর লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পুলিশ। এরপর ২৬শে সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপটেনস টেস্টে ইতালি গমনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। এর ভিত্তিতে গত ৯ই সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপটেনস টেস্টের জন্য ইতালি গমনের অনুমতি চেয়ে স্মারক নং- ইকুইপমেন্ট/আর্মস/২৯-২০১৩/২১০৬৮/১(৪) তারিখ: ৯ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ এর ভিত্তিতে একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে এপ্রিলের তারিখ দিয়ে দু’টি এবং মার্চের তারিখ দিয়ে একটি স্মারকের কথা বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠিতে বলা হয়েছে, অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য আর্ন্তজাতিক দরপত্রের মাধ্যমে প্রিন্সিপাল: সিমাড এস.পি.এ, ইতালি, লোকাল এজেন্ট: নিউ ভিক্টর লিমিটেড, ৬১, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, রেড ক্রিসেন্ট বিল্ডিং, ঢাকা-১০০০ এর নিকট থেকে ইতালির তৈরি তিন লাখ পিস ১২ বোর শটগান কার্টিজ (রাবার বলস ইন ভেরিয়াস পিলেটস) ফ্যাট এর জন্য তিন জন পুলিশ কর্মকর্তার নাম মনোনয়ন দিতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিউ ভিক্টর লিমিটেড অনুরোধ জানায়। এর ভিত্তিতে মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. আমির উদ্দিন (অতিরিক্ত আইজিপি, অর্থ ও উন্নয়ন), মো. আমিনুল ইসলাম (এআইজি, সংস্থাপন) এবং শরীফ মোস্তাফিজুর রহমান (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অর্থ ও বাজেট)-কে মনোনয়ন দিয়েছেন। মনোনীত কর্মকর্তাদের ইতালি যাতায়াত থাকা-খাওয়াসহ ইতালি অবস্থানকালীন যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবে। এসব কর্মকর্তা ২৯শে সেপ্টেম্বর বা নিকটবর্তী সময়ে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ২রা অক্টোবর বা নিকটবর্তী সময়ে তারা দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠিতে বলা হয়, অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ ও উন্নয়ন) মো. আমির উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা তার সফরসঙ্গী হবেন। এতে বাংলাদেশ সরকার বা ওই কোম্পানির কোন আর্থিক সংশ্লেষ থাকবে না। তাঁর পরিবারের ভ্রমণ ব্যয়ভার তিনি নিজে বহন করবেন। এসব কর্মকর্তার ফ্যাট-এর উদ্দেশ্যে ইতালি গমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এ চিঠি পেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারি আদেশ (জিও) জারি করে। কিন্তু ইতালি গমনে যাওয়ার আগে ১৬ই সেপ্টেম্বর স্থানীয় এজেন্ট নিউ ভিক্টর লিমিটেড পুলিশের আইজি বরাবর একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে তারা জানান, টেকনিক্যাল কারণে ‘ফ্যাট’ প্রোগ্রামটি করা যাচ্ছে না। আমাদের প্রিন্সিপাল এ বিষয়ে বলেছেন, তারা ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রপ্তানি লাইসেন্স পেলেই তারা বিষয়টি জানাবেন। এরপর ওই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় এজেন্ট নিউ ভিক্টর লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদ রউফ মানবজমিনকে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

No comments

Powered by Blogger.