ওভারটেক করতে গিয়ে দুটি বাস মুখোমুখি -৩২ বাসযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু by মুক্তার হোসেন

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রেজির মোড়ে নাটোর-ঢাকা মহাসড়কে গতকাল সোমবার বিকেলে যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩২ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বাসিন্দা। ওভারটেক করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে বাসের যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
>>নাটোরের বড়াইগ্রামে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া কেয়া পরিবহনের বাসটি। গতকালের ভয়াবহ ওই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ৩২ জন l প্রথম আলো
নাটোরের বনপাড়া হাইওয়ে থানা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেল সাড়ে চারটায় ঢাকা থেকে আসা রাজশাহীগামী কেয়া পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা-ব-১১-৫৬৫৬) সঙ্গে নাটোর থেকে গুরুদাসপুরগামী অথৈ পরিবহনের একটি বাসের (সিলেট-ব-৬৩৮৪) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে চারজন নারীসহ ৩২ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২০ জন। নিহতদের ৩০ জনই গুরুদাসপুরগামী বাসের যাত্রী। তাঁরা নাটোরের জজ আদালতে মামলার হাজিরা দিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। উভয় বাসের চালক ও সহকারীরাও নিহত হয়েছেন। আহতদের বড়াইগ্রামের আমেনা হাসপাতাল, পাটোয়ারী হাসপাতাল, জয়নব হাসপাতাল, বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নাটোর সদর হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রেজির মোড়ের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন জানান, কেয়া পরিবহনের বাসটি একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে অথৈ বাসের সঙ্গে বিকট শব্দে সামনাসামনি সংঘর্ষ হয়। এতে অথৈ বাসটি সামনের ও বাম পাশের পুরোটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। কেয়া বাসের সামনের অংশ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। দুটি বাসই সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়।
আমেনা হাসপাতালের আহত যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেয়া পরিবহনের বাসটি আমাদের বাসটিকে ধাক্কা দেয়। আমরা নানা দিকে ছিটকে পড়ি। আমাদের অথৈ বাসের অধিকাংশ যাত্রী নাটোর আদালত থেকে উঠেছিলাম। বাকি কয়েকজন নাটোর বাসস্ট্যান্ড থেকে ওঠে।
নিহত ব্যক্তিদের কয়েকজন হলেন: লাবু হোসেন (৩০), তোফাজ্জল হোসেন (৪০), কহির উদ্দিন (৬০), সোহরাব হোসেন (৫০), কিসমত উল্লাহ (৩৫), বাবু শেখ (৪৫), কুদ্দুস আলী (৬৫), হাফিজুর রহমান (৫৮), রেজাউল করিম (৩২), আরিফ হোসেন (৪৫), আবদুর রহমান (৫৫), শরিফ উদ্দিন (৪৫), আলাল হোসেন (৫০), আলম শেখ (৩৫), রব্বেল হোসেন (৫৫), জান মোহাম্মদ মোল্লা (৫৬), এবাদ আলী (৬৫), আতাহার হোসেন (৪৫), আয়নাল হোসেন (৫৫), আইনজীবী কৃষ্ণপদ সরকার (৪২), রহমত আলী (৪৬), শৈলেন তিলক (৪৫), সেবা খাতুন (৮), বেলাল হোসেন (৪৭) ও চট্টগ্রামের অজ্ঞাত একজন। অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি। লাশগুলো নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেন। ঘটনার পর ওই সড়কে দুই ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। তবে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। মহাসড়ক পুলিশের বনপাড়া থানার ওসি ফুয়াদ রুহানী বলেন, ২৬ জনের লাশ শনাক্ত করে তাঁদের স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। কেয়া পরিবহনের চট্টগ্রামের এক অজ্ঞাত লাশ রাত আটটা নাগাদ থানায় ছিল। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে গুরুদাসপুরের সিমা খাতুন ও তাঁর বাবা জহুরুল ইসলাম। তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে মানুষের ভিড় দেখা যায়। মহাসড়কের ওপর নিহত অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সবচেয় করুণ দৃশ্য দেখা যায় বনপাড়া মহাসড়ক পুলিশের থানার সামনে। সেখানে সারি সারি লাশের মধ্যে স্বজনদের লাশ পেয়ে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।  নাটোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ রাজনৈতিক নেতারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

No comments

Powered by Blogger.