অস্থিতিশীল রাজনীতি ও অর্থনীতি by গোলাপ মুনীর

আমাদের জাতীয় জীবনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভাজন সময়ের সাথে চরম থেকে চরমতর আকার ধারণ করছে। ফলে কোথাও কোনো জাতীয় ঐকমত্য খুঁজে পাওয়া ভার। দুঃসহ বিভক্তি সবখানে। বিভক্তি সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। পেশাজীবীদের মধ্যে। গ্রামীণ সমাজ থেকে শুরু করে শহুরে সমাজে। এমনকি বিভক্তি নিজেদের মধ্যেও। যদিও বলা হয়, এ বিভক্তি রাজনৈতিক আদর্শকে কেন্দ্র করে; কিন্তু বাস্তবে এ বিভক্তি সরকারের পক্ষ নেয়া কিংবা সরকারের বিপক্ষে অবস্থানের প্রক্রিয়ার মধ্যে বৃত্তবন্দী। এক পক্ষে সরকার সমর্থক, অন্যপক্ষে সরকারের বিরোধিতাকারী। সরকারপক্ষে থাকাদের লক্ষ্য সরকারের সুনজরে থেকে বৈধ-অবৈধ, নৈতিক-অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা আদায়ের পথ খোলা। এর বিপরীতে থাকা সরকারবিরোধী পক্ষের তেমনি লক্ষ্য হচ্ছে বর্তমান সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে যাতে তাদের পক্ষেও এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে যেন অসুবিধা না হয়। এভাবেই গোটা জাতি আজ সরকারি মহল ও সরকারবিরোধী মহলে বিভক্ত। ফলে দেশে নেই সর্বসম্মত কোনো জাতীয় ইতিহাস, নেই জাতীয় ঐকমত্যের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মসূচি। তেমনি ঐকমত্যের সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মসূচিও নেই। জাতীয় মসজিদের ইমাম ও খতিব নিয়োগ, দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ শোলাকিয়া মাঠের ঈদের জামাতের ইমাম নিয়োগসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহের ইমাম নিয়োগে চলে নোংরা রাজনীতি। ইমাম নিয়োগে যোগ্যতা যেখানে প্রাধান্য পাওয়ার কথা, সেখানে প্রাধান্য পায় রাজনৈতিক আনুগত্য। বিবেচনায় আসে, নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি ক্ষমতাসীনদের স্বার্থরক্ষায় থাকবেন কতটুকু অনুগত, যেখানে ঈমান-আকিদা ও ইসলামের প্রতি তার আনুগত্যের বিষয় হয়ে ওঠে গৌণ।
রাজনৈতিক বিশ্বাস আজ গুরুত্ব পায় ধর্মীয় বিশ্বাসের চেয়ে বেশি। ফলে আমরা দেখতে পাই এক পক্ষের রাজনীতিবিদেরা বিপরীত মেরুর রাজনীতিতে বিশ্বাসীদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ তো করেই না, এমনকি তার নামাজে জানাজায়ও যোগ দেয় না। পারলে অন্যদেরও এ নামাজে জানাজায় অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখার প্রয়াস চালায়। সুযোগ পেলে ওই মৃত ব্যক্তির চরিত্র হননেও লিপ্ত হয়, যা মৃতজনের স্বজনদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের বিভাজন রাজনীতির মাঠে অসহিষ্ণুতার মাত্রা বেড়ে চলার প্রক্রিয়া যেন থামতে চাইছে না। এর ফলে প্রতিপক্ষ দমন-পীড়নও সমাজে হাজির হচ্ছে নতুন নতুন অভাবনীয় মাত্রা নিয়ে। খুন, গুম, অপহরণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন যেন থামতেই চাচ্ছে না। এর ফলে রাজনৈতিক বিভাজন এক দুঃসহ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না কোনো ক্ষেত্রে। এর সবচেয়ে দুঃখজনক উদাহরণ হচ্ছে গত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন। একটি জাতি জাতীয় জীবনে কতটুকু চরম মাত্রায় বিভাজিত হতে পারে, তার ঐতিহাসিক উদাহরণ হয়ে থাকবে ওই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারো কাছে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে, এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ মেলেনি। ভারত এ নির্বাচনে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সমর্থন জুগিয়েছে সত্য, তবে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো বলেনি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে, কিংবা এই নির্বাচন ছিল গণতন্ত্রসম্মত। কেমন ছিল এ নির্বাচন, তা আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে। এমনকি বর্তমান সরকারের নীতি-সমর্থক পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ভোট ডাকাতির যেসব চিত্র দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে, তা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের জাতীয় ভাবমর্যাদা ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, সরকারি দলের প্রার্থীদের এজেন্টের মাধ্যমে ব্যালটে সিল দিয়ে প্রকাশ্যে হাস্যমুখে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, সরকারবিরোধী প্রার্থীদের এজেন্টের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া, কিংবা কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়াসহ এমন কোনো অনিয়ম নেই, যা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ঘটেনি। তা ছাড়া সরকার বিরোধী জোটের নির্বাচন বর্জনের আহ্বানের মুখে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনেই সরকারি দলের ও তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী ঘোষিত হয়েছেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী আসন সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতো যদি না নানা কূটকৌশলের মাধ্যমে রওশন এরশাদকে হাত করে ও জেনারেল এরশাদকে সিএমএইচে ক’দিন আটকে রেখে ও গলফ মাঠে পাঠিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা না হতো। সে যাই হোক, এ নির্বাচনের আগে আওয়ামী নেতানেত্রীরা একাধিকবার বক্তব্য দিয়ে দেশবাসীকে এ বার্তা দিয়েছিলেনÑ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। এ নির্বাচন শেষে সরকার বিরোধী দলগুলোর সাথে আলোচনা করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকারবিরোধী দলগুলো সে অনুযায়ী সংলাপে বসার আহ্বান জানায়; কিন্তু সরকারপক্ষ জানায়, বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে কোনো আলোচনায় যাবে না। পুরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে ২০১৯ সালে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনে। এর আগে কোনো নির্বাচন নয়।
এ ধরনের অবস্থান নিয়ে এরই মধ্যে প্রায় ১০ মাস সরকার পরিচালনা করছে এ সরকার। একইভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন যাতে কোনো মতেই দানা বাঁধতে না পারে সেজন্য বিরোধী দলমতের লোকদের ধরপাকড়, মামলা হামলা সময়ের সাথে বাড়ানো হচ্ছে। এ কঠোরতা আরো বাড়ানো হবে সরকারি দলের নেতানেত্রীরা বক্তৃতা-বিবৃতিতে প্রকাশ করছেন। অপর দিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও তার অন্য মন্ত্রীরা বিভিন্ন দেশ চষে বেড়াচ্ছেন কূটনীতিক তৎপরতার মাধ্যমে তার সরকারের প্রতি অন্যান্য দেশের সমর্থনের পারদমাত্রা বাড়িয়ে তোলার মানসে। এসব কূটনৈতিক বৈঠক-সাক্ষাতে বিদেশীরা কথা বলছেন কূটনৈতিক কায়দায়। সেই সাথে এরা আদায় করে নিচ্ছেন যার যার জাতীয় স্বার্থ। আসলে কোনো দেশে জনসমর্থনহীন ও বিতর্কিত সরকার থাকলে বিদেশীরা তাকে স্বার্থ আদায়ের সহজ সূত্র পায়। কূটনৈতিক সতর্ক শব্দ ব্যবহার করে এরা সে স্বার্থ আদায়ের ক্ষেত্রটি প্রশস্ত করে। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটছে তাই। সে যা-ই হোক, বিভিন্ন কূটনৈতিক বৈঠকের পর আমাদের সরকার এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন বিশ্বের সব দেশ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে। অতএব এ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে দেশের বাইরে কোনো সমস্যা নেই। এখন দরকার শতভাগ কঠোরতা অবলম্বন করে দেশে সরকারবিরোধী দলমতকে অস্তিত্বহীন করে দিয়ে দেশে দীর্ঘ দিনের আওয়ামী প্রত্যাশামতে একদলীয় শাসন কায়েমের মধ্যে চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকার পথ পাকাপোক্ত করা; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ভারতের কথা বাদ দিলে বাকি সব দেশই আগের মতোই মনে করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনো মতেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছিল না। এ নির্বাচনে জনমতের বিন্দুমাত্র প্রতিফলন ঘটেনি। এ নির্বাচন গণতন্ত্রের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। গত ১৭ অক্টোবরে দেশের জাতীয় গণমাধ্যমগুলোয় একটি খবর প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়Ñ ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের হতাশা এবার প্রকাশ করা হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। গত ১৬ অক্টোবর যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে তাদের এ অবস্থান তুলে ধরা হয়। এর আগে গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এ হতাশার কথা জানিয়েছেন। ওই সময় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্মান পায়Ñ এমন একটি মুক্তসমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্বের প্রশ্নে একমত হন উভয়ে। তবে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী সে গুরুত্বের কথা ভুলেই গেছেন বলে মনে হয়।
গত ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের ‘ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস’ থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ-কান্ট্রি কেস স্টাডি আপডেট’ শীর্ষক এ রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি ছাড়াও বলা হয়, বাংলাদেশের মিডিয়া বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের সমালোচনাকারী বা ভিন্নমতাবলম্বীদের আটক করা হচ্ছে। সীমিত করা হয়েছে এনজিও কার্যক্রম। এতে বাংলাদেশের সবার অংশগ্রহণমূলক একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার আহ্বান জানানো হয় বিশেষভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকে ডেভিড ক্যামেরন এ বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এ রিপোর্টে বলা হয়, রাজনৈতিক সহিংসতায় ঝুঁকি অব্যাহত রয়েছে বাংলাদেশে। এনজিওগুলোর রিপোর্টে বলা হচ্ছে, নির্বাচন পরবর্তী মাসগুলোয় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম বেড়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে এ রিপোর্টের অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বলা হয়েছেÑ এ নির্বাচনে সংসদের অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রার্থীরা জিতেছেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। নির্বাচনের দিন নিহত হন ২১ জন। অপর দিকে গত ৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সম্পর্কিত এক সেমিনারে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত উপসহকারী মন্ত্রী টেড ব্রাউন বলেনÑ গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর অবস্থান পরিবর্তন করেনি। এ সেমিনারে বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা উভয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। টেড ব্রাউন ছিলেন ‘বাংলাদেশ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান বক্তা। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে সত্যিকারের একটি নির্বাচন চায় এবং এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাগিদ অব্যাহত রেখেছে। এখানেই শেষ নয়, ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন এবং চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা সংক্রান্ত প্রকল্পে (এসইএমবি) অনুদান কমিয়ে দিয়েছে দাতা সংস্থা। এ প্রকল্পের পুরো অর্থের জোগান দেয় ইউএসএ আইডি, ইউকে এ আইডি ও ইউরোপীয় কমিশন। প্রকল্পটির সমন্বয়কারী জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। ইতোমধ্যেই ইউএনডিপি ইসিকে আনুষ্ঠানিক জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৬ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত টাকা ছাড়ের পরিমাণ আরো কমে যাবে। বিজ্ঞপ্তির পটভূমিতে ইউএনডিপি বলেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ অবস্থায় দাতারা এ প্রকল্পে অর্থ কমিয়ে দেয়ার কথা বলেছে। এরপরও ৫ জানুয়ারির প্রবল বিতর্কিত নির্বাচন সূত্রে গঠিত সরকার পুরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার গোঁ ধরেছে, বিরোধী মতাবলম্বীদের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিকে একেবারেই আমলে নিচ্ছে না। বিরো ধীদলের সংলাপের দাবিকে অবহেলা করে যা ইচ্ছে তাই বলছে। সে সাথে জোরজবরদস্তি করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানা কূটকৌশলে লিপ্ত হচ্ছে। যেমনি ইচ্ছে আইন-কানুন তৈরি করছে, সংবিধান কাটাছেঁড়া করছে। আর দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়ার গোয়েবলসীয় প্রচারে লিপ্ত হয়েছে; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এখনো বাংলাদেশে চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের মধ্যে চরম দরিদ্র দুই কোটি। প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে এদের বাঁচতে হয়। ুধা-অপুষ্টি এদের নিত্যসঙ্গী। এরা বঞ্চিত সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে।
আসলে জাতিকে বিভাজিত রেখে জনবিচ্ছিন্ন কোনো সরকার দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। সরকার নিজেকে যতই বাহবা দিক দেশবাসী কিন্তু সে বাস্তবতারই প্রতিফলন দেখছে। সমাজে, অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে বিরাজ করছে দুঃসহ অস্থিতিশীলতা। সর্বত্রই শুধু বিশৃঙ্খলা আর বিশৃঙ্খলা। ধারাবাহিকভাবে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার পর এবার বিনিয়োগের পরিমাণ কমছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দেশের বিনিয়োগ কমছে আড়াই হাজার কোটি টাকার চেয়ে বেশি। একই সাথে কমে গেছে, বিদেশে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সাময়িকভাবে কিছুটা বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হলেও দ্ইু মাসের মিলিত হিসাবে জুলাই-আগস্টে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি ডলার। অর্থনীতি হয়ে উঠছে অস্থির। মূল্যস্ফীতি এখনো উদ্বেগজনক। ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে শতভাগেরও বেশি। মোবাইল ফোন কলে বসানো হয়েছে সারচার্জ। এভাবে যেখানে পারছে সরকার জনগণের পকেট কাটছে। জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে সরকার খরচের টাকা জোগাড় করছে। এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় দেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি। সে জন্য অপরিহার্য হচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণে দেশের ভেতরে-বাইরে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সর্বজনসম্মত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। যত দিন ভোটারবিহীন জনবিচ্ছিন্ন সরকার ক্ষমতায় থাকবে, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রয়াস যত দিন জারি থাকবে, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর অমানবিক রাজনৈতিক নিপীড়ন যত দিন চলবেÑ তত দিন সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে কোনো ধরনের স্থিতিশীলতা আসবে না। গণতন্ত্রের দেশ ছেড়ে পালানো ছাড়া কোনো গত্যন্তর থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.