গার্মেন্ট কারখানা ‘পরিদর্শনই যথেষ্ট নয়’ -দ্য গার্ডিয়ান

বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলোর সমস্যা ঠিক করতে পরিদর্শনই যথেষ্ট নয়। এমনই দাবি উঠেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলোর কয়টি থেকে বিদেশে পোশাক রপ্তানি হয় সেটি বের করা হয় নি। কারখানার অবস্থার উন্নতি ঘটানোয় কোন প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়নি। এসব ছাড়া সমস্যা সমাধানে যে বাংলাদেশের অ্যাকর্ড-এর কথা বলা হচ্ছে, সেটি সফল হতে এখনও অনেক দেরি। ১৭৫টিরও বেশি ইউরোপিয়ান ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা ‘বাংলাদেশ অ্যাকর্ডে’ যোগ দিয়েছেন। অপরদিকে ২৬ মার্কিন ও কানাডিয়ান কোম্পানি গঠন করেছে ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি’। বাংলাদেশের গার্মেন্ট কোম্পানিগুলোতে শ্রমিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সাধারণ ইস্যুগুলো সমাধানে কোম্পানিগুলো এক হয়েছে। দুই গ্রুপ বাংলাদেশের প্রায় ১৭০০ গার্মেন্ট কারখানা পরিদর্শন করেছে এবং পৃথক কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। কারখানা পরিদর্শন হচ্ছে কারখানা ও শ্রমিকদের নিরাপদ রাখার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। রানা প্লাজা ধসের ১৮ মাস পরেও বাংলাদেশের কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে দু’টি প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। প্রথমটি হচ্ছে ঠিক কতটি গার্মেন্ট কারখানায় বাইরের দেশের জন্য পোশাক বানানো হয়। অপর প্রশ্নটি হচ্ছে, কিভাবে বাংলাদেশের কারখানাগুলোর নিরাপত্তা সমস্যা সমাধান করা হবে। কোন কর্তৃপক্ষই এখনও পরিষ্কার করে জানায়নি, ঠিক কতটি গার্মেন্ট কারখানায় রপ্তানির উদ্দেশ্যে পোশাক বানানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে ১৮০০টি কারখানার ক্ষেত্রে ‘অ্যাকর্ড’ ও ‘অ্যালায়েন্স’ দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু সমপ্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, রপ্তানির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার কারখানায় পোশাক তৈরি করা হয়। এ প্রতিবেদনে অনেক কারখানার কথা বলা হয়েছে, যেখান থেকে বিদেশী কোম্পানিগুলোর অর্ডার কম দামে তৈরি করা হয়। সেসব কারখানা এখানে তৃতীয় পক্ষ। এসব কারখানার দায়িত্ব নিতে রাজি নয় বিদেশীরা। তবে এসব কারখানাগুলোতেও পরিদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইউরোপ ও আমেরিকান কোম্পানিদের দু’টি গ্রুপ। কিন্তু সেসব বাস্তবে হয়েছে খুব কম। এ দু’টি গ্রুপের দায়িত্বের বাইরে যেসব কারখানা রয়ে গেছে, সেসবের দায়িত্ব পড়ে সরকারের উপর। কিন্তু অনিরাপদ কারখানাগুলো পরিদর্শন করতে যে লোকবল বা সামর্থ্য প্রয়োজন, তার অভাব রয়েছে সরকারের। দ্বিতীয় যে প্রশ্নের উত্তর এখনও জানা যায় নি, সেটি হচ্ছে, কারখানা স্থানান্তর কিংবা অবস্থার উন্নতি ঘটাতে কিভাবে তহবিল গঠন করা হবে। দু’টি পরিদর্শনকারী গ্রুপই কারখানাগুলোতে হাজারো সীমাবদ্ধতা খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন বড় ব্র্যান্ড বা খুচরা বিক্রেতারা এসব কারখানার সীমাবদ্ধতা পূরণে বা সংস্কারে কোন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানা যায় নি। হ্যাঁ, উভয় গ্রুপই কোন কোন জায়গায় সংস্কার করা হবে, সেটি খুঁজে বের করছে। একই সঙ্গে কোন কারখানার সংস্কার কাজ চলার সময় সেটির শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণে কিছু অর্থ প্রদানে সম্মত হয়েছে। কিন্তু যেসব সংস্কারের খরচ দেবে কে? মার্কিন ও কানাডিয়ান কোম্পানিদের অ্যালায়েন্স অনুমান করে বলেছে, প্রতি কারখানায় আড়াই লাখ ডলার লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান, মার্কিন ও কানাডিয়ান কোম্পানিগুলোর আওতাধীন কারখানাগুলো সংস্কারে মোট খরচ আসবে প্রায় ৪০ কোটি ডলার। কিন্তু কেউই এখনও প্রকাশ্যে এ অর্থ পরিশোধের ঘোষণা দেয় না। ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ১ কোটি ডলার এ সংক্রান্ত সংস্কারে গার্মেন্ট মালিকদের দিতে অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা ব্র্যান্ড ও খুচরো বিক্রেতাদের কাছে ঋণ পরিশোধবিষয়ক নিশ্চয়তা চেয়েছে আইএফসি। কিন্তু কোন কোম্পানিই এ ক্ষেত্রে রাজি হয়েছে বলে জানা যায় নি। পরিদর্শন ও নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শ্রমিক ও কারখানার মালিকদের পরবর্তী পদক্ষেপ সমপর্কে জানা উচিত। পশ্চিমা ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের উচিত গোটা গার্মেন্ট সেক্টরের উন্নতির জন্য বাংলাদেশী পোশাক উৎপাদনকারী, বাংলাদেশ সরকার, বিদেশী সরকার, উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করা।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স তৈরি করতে হবে। এর কাজ হবে সমস্যা সমাধানের উপায় বিশ্লেষণ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বাস্তবিক পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে কাজ করা। এ প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া উচিত পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর দু’টি গ্রুপেরও। কিন্তু এর নেতৃত্ব থাকা উচিত স্থানীয়দের হাতে। বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারের মতো বিষয়ে উন্নতি আনতে হলে, আরও বড় লক্ষ্য, আরও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং আরও বড় তহবিল নিয়ে কাজ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.