মহাসড়কে আবার বিভীষিকা -ভারী মোটরযানের চালকদের সামলান

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ঢাকা-নাটোর মহাসড়কে সোমবার বিকেলে দুটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩৩ জনের প্রাণহানি ও ২২ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ থেকে এই বিভীষিকার মাত্রা স্পষ্ট হয়েছে। তবে শুধু দুঃখ প্রকাশই যথেষ্ট নয়। এই বিরাট বিয়োগান্ত ঘটনাটি যদি প্রকৃত অর্থেই রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ দুই পদাধিকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে, তাহলে মহাসড়কে মৃত্যুর অন্তহীন মিছিলের রাশ টানার কার্যকর উদ্যোগও গ্রহণ করা জরুরি।
এই দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, অপরাধবৃত্তি, কর্মক্ষেত্র, নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনা ইত্যাদি সব ধরনের দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা যায়, শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষ। বছরে ১২ হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যায় তার কয়েক গুণ।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো সাধারণভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টার সারা দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের ২০৯টি স্থানকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই অবকাঠামোগত কারণ ছাড়া, মোটরযান চালকদের যোগ্যতা-দক্ষতার অভাব এবং বেপরোয়াভাবে যানচালনার প্রবণতাকেও দায়ী করা হয়। সোমবারের দুর্ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেটি মহাসড়কের কোনো ব্ল্যাক স্পট নয়। একটি যাত্রীবাহী বাস একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি যাত্রীপূর্ণ বাসের মুখোমুখি হলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। উভয় বাসের চালকই প্রাণ হারিয়েছেন। অর্থাৎ বেপরোয়া যানচালনার ফলেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রাথমিক ধারণা।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে মোটরযান চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়ায় কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, যদিও তা যথেষ্ট নয়। তবে বাস, ট্রাক ইত্যাদি ভারী মোটরযানের চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়ায় আরও কঠোরতা আরোপ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রয়োজন চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং তাঁদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

No comments

Powered by Blogger.