আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পেতে তৎপর সরকার -পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছুটছেন নিউ ইয়র্ক থেকে পুসান

৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। এ তৎপরতায় কিছু ক্ষেত্রে সফলতা আসছে। তবে জাতিসঙ্ঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো সুযোগ পেলেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, সংলাপের কথা বলছে। মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাচনে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চলতি সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। এই নির্বাচনে এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপে চারটি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে পাঁচটি দেশ। এগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কাতার ও থাইল্যান্ড। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন আদায়ে গত ১৫ অক্টোবর শাহরিয়ার আলম নিউ ইয়র্ক গেছেন। আবার আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারণা চালাতে আজ বুধবার তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যাবেন। ২৭ অক্টোবর পুসানে আইটিইউ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নির্বাহী পদ নয়, কেবল কাউন্সিল মেম্বার পদের জন্য বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এতে দক্ষিণ এশিয়া ও অস্ট্রেলেশিয়া গ্রুপের ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১৮টি দেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দেশগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জাপান, কোরিয়া, কুয়েত, লেবানন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এর আগে দু’টি নির্বাচনে বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) চেয়ারপারসন নির্বাচনে স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন।
কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে সমস্যায় রয়েছে সরকার। সম্প্রতি ব্রিটেন ও ইটালি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য দাঙ্গা দমনে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ সরবরাহ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে সরকার এসব সরবরাহ পেতে বিকল্প বাজারের সন্ধান করছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইতঃপূর্বে এক প্রস্তাবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) দায়মুক্তি দেয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর একটি যৌথ প্রস্তাবের বিতর্কে র‌্যাব এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বিরোধী নেতাকর্মীদের গুমসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সাথে গুম হওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত মুক্তি দিয়ে ঘটনাগুলো তদন্তে একটি স্বাধীন সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এই প্রস্তাব অনুমোদনের পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য দাঙ্গা দমনে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ সরবরাহ দিতে অস্বীকৃতি জানায় ব্রিটেন ও ইটালি।
তবে ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে গঠিত সরকার জাতিসঙ্ঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আদায়ে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর আওতায় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের শীর্ষ বৈঠকগুলোর তথ্যবিভ্রাট ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থনের ভ্রান্ত ধারণা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে বারবার। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় সরকার এক দিকে কূটনীতিতে মার খাচ্ছে, অন্য দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ ও জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে বৈঠক সম্পর্কে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তথ্যের বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব নির্বাচন সম্পর্কে যা বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের কাছে তা ভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু পরবর্তী সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের বক্তব্যে প্রকৃত তথ্য উঠে এসেছে। ডেভিড ক্যামেরন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর বান কি মুন সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
ভবিষ্যতের স্বার্থে রাজনৈতিক মতবিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তির জন্য সংলাপের তাগিদ দেয়ায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের একটি বার্তা বিশ্বসংস্থায় বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৪০ বছর পূর্তি উপলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ক্রোড়পত্র থেকে বাদ দেয়া হয়। এর পরিবর্তে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি নিল ওয়াকারের একটি বার্তা দেয়া হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক প্রতিবেদনে ব্রিটেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তাদের অসন্তোষের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.