ব্যক্তিগত শত্রুতার জের- দুই পায়ে গুলি করে যুবককে সন্ত্রাসী সাজাল পুলিশ!

ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এক গাড়িচালককে দুই পায়ে গুলি করে সন্ত্রাসী সাজানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে। দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ গাড়িচালক শাহ আলমকে (২৬) জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত এসআই আনোয়ার হোসেন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় কর্মরত। এ ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটি করেছে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ।
শাহ আলমের স্বজনেরা জানান, দুই বছর আগে তিনি মোহাম্মদপুর থানার গাড়ি চালাতেন। তখন এসআই আনোয়ার মোহাম্মদপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। শাহ আলম স্ত্রী শান্তাসহ মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি এলাকায় থাকতেন। সেখানে তাঁদের একটি মেয়েও হয়। মেয়ের বয়স এখন আড়াই বছর। পারিবারিক কলহের জেরে দেড় বছর আগে শান্তা বাঁশবাড়ি ছেড়ে কেরানীগঞ্জে বাবার বাড়ির এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে চলে যান। যাওয়ার আগে তিনি শাহ আলমের মালিকানাধীন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিক্রি করে দেন। শাহ আলম নানাভাবে খোঁজাখুঁজি করে কেরানীগঞ্জের আরশিনগরের ওই বাড়ির সন্ধান পান। এরপর দেড় মাস আগে শাহ আলম জানতে পারেন যে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে এসআই আনোয়ারের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে এবং আনোয়ারের ভাড়া করা বাসাতেই তিনি থাকছেন। এরপর তিনি কেরানীগঞ্জের আরশিনগরে গিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্যদের বিষয়টি জানান এবং সুবিচার চান। এ বিষয়ে একাধিক সালিস-বৈঠকও হয়েছে। সবশেষে গত রোববার রাতে এক লোকের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে শাহ আলমের দুই পায়ে গুলি করে তাঁকে সন্ত্রাসী সাজিয়েছেন এসআই আনোয়ার।
পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার রাতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মীমাংসার কথা বলে পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া এসআই আনোয়ার তাঁকে চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলেন।
এরপর তালতলা এলাকায় নিয়ে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরা অবস্থাতেই দুই পায়ে গুলি করেন। শাহ আলম বলেন, তাঁর ডান পায়ে শটগান দিয়ে আর বাঁ পায়ে পিস্তল দিয়ে গুলি করেছেন এসআই আনোয়ার। ডান পায়ের হাঁটুর নিচের পুরো মাংসপেশিই গুলিতে উড়ে গেছে।
কেরানীগঞ্জের আরশিনগরের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরশিনগরের ছয়তলা একটি বাড়ির চারতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন এসআই আনোয়ার। সেই ফ্ল্যাটে এখনো শাহ আলমের স্ত্রী থাকছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, মোহাম্মদপুরের লোহালক্কড়ের ব্যবসায়ী পরিচয়ে আনোয়ার ওই বাসাটি ভাড়া নেন। স্থানীয় নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন, আনোয়ার কখনো ওই বাসায় টানা ছয় ঘণ্টা থাকতেন না। সর্বোচ্চ তিন থেকে চার ঘণ্টা ওই বাড়িতে থাকতেন। তবে গত ঈদের আগে এ বিষয়ে সালিস-বৈঠক বসার পর থেকে আনোয়ার আর আসেন না।
ওই সালিসে উপস্থিত থাকা একজন বলেন, গত ঈদের আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শাহ আলম, তাঁর স্ত্রী শান্তা ও শান্তার বাবা-মাসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় লোকজনের মত ছিল, বিয়ে ছাড়া আনোয়ারের সঙ্গে শান্তার এক বাড়িতে থাকা ঠিক নয়। একই সঙ্গে শাহ আলমের সিএনজিচালিত অটোরিকশার টাকা দিয়ে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার পক্ষে ছিলেন তাঁরা। ১৭ অক্টোবর পরের বৈঠকের তারিখ ছিল। তবে শান্তার পরিবার আর বসতে রাজি হয়নি।
অভিযুক্ত এসআই আনোয়ার হোসেন অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ শাহ আলম একজন পেশাদার অপরাধী। ঢাকার বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ছিনতাই-ডাকাতিসহ অনেক মামলা রয়েছে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের সময় সিসি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া তাঁর ভিডিও ফুটেজও পুলিশের হাতে রয়েছে। তিনি বলেন, রোববার রাতে পুলিশ খবর পায় যে তালতলা এলাকায় একটি অপরাধী দল সংগঠিত হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ অতিরিক্ত জনবল নিয়ে সেখানে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। পুলিশ দেখে সন্ত্রাসীরা দূর থেকেই পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে শাহ আলম গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর হাত থেকে গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, রোববার রাত দেড়টার দিকে তাঁকে ফোন করে জানানো হয় যে একজন সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে ওই সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়। তখন তিনি (উপকমিশনার) বিধি মোতাবেক মামলা করে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বলেন। সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে একজন ফোন করে বলেন, এটি নিছক সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের ঘটনা নয়। এর পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতাও থাকতে পারে। এরপর তেজগাঁও বিভাগের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার ও একজন সহকারী কমিশনারকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.