ভক্তদের মানত by এনায়েতুর রহমান

খোলা জায়গায় খুপরি ঘর। এ ঘরের নিচে লাঠি পুঁতে রাখা হয়। লাঠির মাথায় পিতলের চাঁদ-তারা। এর পাশে আগরবাতি জ্বালিয়ে রাখা। আর সেখানেই হয় গানের আসর ‘একদিল’। গানের এই আয়োজনে মূল কাণ্ডারি লাঠি। যার নাম আশা। আর এই আসরে আসেন বিভিন্ন মানুষ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। সংগীত শেষে সেখানে শিরনি বিতরণ হয়। আশা পূরণের জন্য শিরনি দিয়ে আশা উঁচিয়ে রোগীর গায়ে ঝাড়ফুঁক করা হয়। এতে পূর্ণ হয় মনোবাসনা, রোগবালাই। এ গানের আসরের নাম ‘একদিল গান’। আশার ওপর আশা করে ভক্তদের মানত হচ্ছে কয়েক যুগ ধরে। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার শিবগঞ্জ-বালুঘাট সড়কের বানার নদীর তীরের হরিরাম বাড়িতে সড়কের পাশে একটি খুপরি ঘর। খুপরি ঘরে বসানো হয়েছে আশা। এই আশা দিয়ে একদিল গানের দল গান করতো বিভিন্ন স্থানে। হরিরাম বাড়ির শিবু গায়েন একদিল গানের প্রধান হয়ে গান করতো অনেক দিন আগে। শিবু গায়েন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে মানিক শেখ গান করতো এই আশা দিয়ে। মানিক শেখ মারা যাওয়ার পর তার দুই ছেলে আকবর আলী ও কেরামত আলী আর একদিল গান করেনি। মানিক শেখের স্ত্রী শুক্করী বেগম আশাটি গোয়ালঘরে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেন। শুক্কুরী বেগম মারা যাওয়ার পর তার ছেলে আকবর আলী বাড়ির নিকটে একটি খুপরি ঘর তুলে আশার নিচে আগর বাতি জ্বালান। এক সময় মানুষের মধ্যে ধারণা ছিল রোগ থেকে মুক্তি ও সংসারের অশান্তি দূর করতে পারে গাজী কালু। গাজী কালুর পৌরাণিক পালা গান দিয়ে গাওয়া হয় একদিল গান। রোগ থেকে মুক্তি পাওয়াসহ নানা কারণে মানুষ একদিল গান মানত করতো। একদিল গানের দল মাটিতে আশা পুঁতে গান করতো। গানের পালা শেষে বড়া উত্তোলনের সময় (সমাপনী দিনে) এই আশা উত্তোলন করে রোগীর শরীরে ঝাড়ফুঁক দেয়া হতো। প্রতি বছর বোরো ধান কাটা শেষে বড় শিরনি হয় এখানে। তাছাড়া মোমবাতি আগরবাতি প্রতিদিন মানত করে মানুষ। মাসে ২-৩ বার দেয়া হয় শিরনি। আকবর আলী জানান, এক সময় একদিল গানের প্রচলন ছিল বেশি। এখন আগের মতো একদিল গান না থাকায় মানুষ একদিল গানের আশাতে মানত করে থাকেন কিছু পাওয়ার আশায়।

No comments

Powered by Blogger.