শুল্ক রেয়াত ফেরতের নীতিমালা সহজ হচ্ছে by আবু কাওসার

সহজ উপায়ে রফতানিকারকদের শুল্ক রেয়াত সুবিধা ফেরত দিতে নতুন একটি নীতিমালা হচ্ছে। কম সময় এবং প্রক্রিয়া আরও সহজ করার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত নীতিমালায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহযোগিতায় শুল্ক প্রত্যার্পণ অধিদফতর (ডেডো) এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। জানা গেছে, শুল্ক-কর ফেরত দেওয়ার বিষয়ে বিদ্যমান প্রক্রিয়া কীভাবে সহজ ও শিথিল করা যায়, কোথায় দুর্বলতা রয়েছে এবং এ থেকে কতটুকু উপকার পাবেন ব্যবসায়ীরা_ এসব বিষয় পর্যালোচনা করে দেখছে এ-সংক্রান্ত কমিটি। এনবিআরের একজন প্রথম সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের এ কমিটি আইনের খসড়া তৈরি করে এনবিআরের কাছে জমা দেবে। আগামী দু'মাসের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করার পর তা কার্যকর করা হবে। এনবিআরের একজন নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানিমুক্ত ও কম সময়ে তাদের প্রাপ্য শুল্ক-কর সুবিধা ফেরত পেতে পারেন সে জন্য আইন-কানুন আরও সহজ করা হচ্ছে। বিদ্যমান নীতিমালা জটিল_ এ কথা স্বীকার করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা। আশা করছি, প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হলে উপকৃত হবেন রফতানিকারকরা। জানা গেছে, রফতানিকারকদের সুবিধার্থে ডেডো অফিসে একটি হেলপ ডেস্ক খোলা হবে। আবেদনগুলো যাতে দ্রুত যাচাই-বাছাই করা যায় সে বিষয়ে এ ডেস্ক থেকে সহায়তা করা হবে। এ ছাড়া প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করতে ব্যাংকের পিআরসি ইস্যুর সময় একটি কপি ডেডো অফিসে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা করা হচ্ছে। বর্তমানে যে পরিমাণ শুল্ক রেয়াত সুবিধা ফেরত দেওয়া হয় তার বিপরীতে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত নীতিমালার খসড়ায় এ কর কর্তন রহিত করা হচ্ছে। বর্তমানে রফতানিকারকরা বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ যেসব ইউটিলিটি সেবা ভোগ করছেন তার ওপর মূল্য সংযোজন কর আদায় করা হয়। খসড়া নীতিমালায় শতভাগ রফতানিমুখী সকল শিল্পের জন্য ইউটিলিটি সেবাকে মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। শুল্ক প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য প্রতি বছর সুবিধা ভোগকারী রফতানিকারকদের একটি তালিকা প্রকাশের প্রস্তাব থাকছে খসড়া নীতিমালায় বলে জানা গেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। রফতানিকে উৎসাহিত করতে জাতীয় রফতানি নীতিমালায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য এ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ সুবিধা পেতে কিছু শর্ত দেওয়া আছে। এতে বলা হয়েছে_ শুধু সেসব রফতানিকারক এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন, যারা কাঁচামাল ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য তৈরি করে তা রফতানি করবেন।
নিয়ম অনুযায়ী, শুল্ক-কর পরিশোধ করে বন্দরে কাঁচামাল খালাস করতে হয়। পরে সেসব কাঁচামাল কারখানায় এনে তা দিয়ে পণ্য তৈরি করে রফতানি করতে হয়। কাঁচামাল আমদানির বিপরীতে প্রথমেই শুল্ক-কর পরিশোধ করা হয়। পরে পণ্য রফতানির পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে রফতানিকারকদের শুল্ক রেয়াত ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে।
কিন্তু শুল্ক ফেরত দেওয়ার বিদ্যমান প্রক্রিয়া এত জটিল যে, দেশীয় উদ্যোক্তারা এ সুবিধা পেতে পদে পদে হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে অহেতুক কালক্ষেপণ ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ রয়েছে। দেশীয় ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এনবিআরের কাছে অভিযোগ করেছেন, ডেডো যে প্রক্রিয়ায় শুল্ক রেয়াত ফেরত দিচ্ছে, তা খুবই জটিল ও অস্বচ্ছ। এ ছাড়া বিদ্যমান নীতি দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে। তারা প্রচলিত নীতিমালা আরও সহজ করার দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। মূলত ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক ফেরত প্রদানের বিদ্যমান নীতিমালা সহজ ও ব্যবসাবান্ধব করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট পলিসি কো-অর্ডিনেশন কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সহজ উপায়ে ব্যবসায়ীদের শুল্ক ফেরত দেওয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। শুল্ক রেয়াত ফেরত-সংক্রান্ত এনবিআরের এ উদ্যোগ দ্রুত কার্যকরের তাগিদ দেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে। এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.