সরকার হার্ডলাইনে

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ দলটির তিন নেতাকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুপুর সোয়া ২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের অগ্রণী ব্যাংক সংলগ্ন গেট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খন্দকার মাহবুবকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর সোয়া ঘণ্টা পর রাজধানীর বারিধারা এলাকার ৪ নম্বর সড়কের ২৮৮ নম্বর বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে। একই সময় বিএনপিদলীয় এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদকে ওই বাসা থেকে আটক করে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার সাড়ে ৭ ঘন্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাজিম উদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বারিধারার ওই বাসায় বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, এমপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন, হারুন-অর-রশিদ ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। তবে পুলিশ তাদের আটক করে পরে ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যায় গুলশানের বাসায় ১৮ দলীয় জোটের নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দশম জাতীয় নির্বাচনের দু'দিন পরই তিন বিএনপি নেতাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে হার্ডলাইনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিল সরকার। শিগগিরই দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার হচ্ছে। প্রকাশ্যে কোনো কথা বলার পরপরই গ্রেফতার হচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গতকাল প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় বক্তব্য রেখে বের হওয়ার পর পরই গ্রেফতার হন বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেনকে। এরপর সন্ধ্যায় গুলশানে সংবাদ সম্মেলনের পর পরই সেলিমা রহমানকে গ্রেফতার করে ডিবি। পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার সমকালকে বলেন, নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কাজ করছে। ইতিমধ্যে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান বলেন, বিএনপির তিন নেতাকে আটকের পর মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনও তাদের কোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। তবে প্রস্তুতি চলছে। রাতে নাজিম উদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মাসুদুর রহমান আরও বলেন, বিরোধী দলের ঢাকা অভিযাত্রা ও সমাবেশের আগের দিন গত ২৮ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে খন্দকার মাহবুব 'উস্কানিমূলক' বক্তব্য দেন। পরদুই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতা ঘটে। এই অভিযোগেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অবরোধ ও হরতালের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় খন্দকার মাহবুব হোসেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে 'কলঙ্কিত নির্বাচন' বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'এই নির্বাচনে কোনো বৈধ সরকার হতে পারে না। যারা বলছেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এই নির্বাচন, তারা সঠিক কথা বলছেন না।' ওই আলোচনা সভা থেকে বের হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে প্রেস ক্লাব থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। এ সময় প্রেস ক্লাবের অগ্রণী ব্যাংকের গেট থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টাকে ডিবির গাড়িতে তোলা হয়। এর পর নেওয়া হয় মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে। বিকেলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একটি দল খন্দকার মাহবুবের সঙ্গে দেখা করতে মিন্টো রোডে যায়। গতকাল বিকেল থেকে গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আজ বিএনপির তিন নেতাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হতে পারে। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বারিধারার ৪ নম্বর সড়কের ২৮৮ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই ভবনের তৃতীয় তলায় মিলন, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের বিএনপিদলীয় এমপি নাজিম উদ্দিন ছাড়াও ফারুক, বিএনপির সাংসদ এবিএম আশরাফউদ্দিন নিজান, লায়ন হারুনুর রশিদ ও শিরীন সুলতানা ছিলেন। পুলিশ বাড়িতে ঢুকেই সেখানে উপস্থিত বিএনপির সব নেতাকে আটকের পর নিচে নিয়ে যায়। কিছু সময় পর নাজিম উদ্দিন ও মিলনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়। ওই বাড়িটি বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আহমেদের। রাতে ডিবি কার্যালয়ে থেকে নাজিম উদ্দিনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। মহিলা দলের নেত্রী শিরীন সুলতানা সমকালকে বলেন, পুলিশ এসে আমাদের সবাইকে নিচে নিয়ে যায় এবং গাড়িতে তোলে। এর পর গাড়ি থেকে নামিয়ে ওপরে নিয়ে আসে। পুলিশ জানায়, আপনাদের আর দরকার নেই।
কর্মসূচি ঘোষণার পর পরই গ্রেফতার সেলিমা :রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় গতকাল সন্ধ্যায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান। সংবাদ সম্মেলনে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল বাড়ানোর ঘোষণা দেন বিএনপি নেতা সেলিমা রহমান। এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে আটক করে। প্রথমে সেলিমা রহমানকে তার নিজ ফ্ল্যাটে না পাওয়ায় একই ভবনে তার ভাইয়ের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে সেলিমা রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। জোরদার হচ্ছে অভিযান :জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযান জোরদার হবে। স্থগিত কেন্দ্রে ভোটের আগে বিশেষ অভিযান চালাতে পুলিশের পক্ষ থেকে মত দেওয়া হয়। নির্বাচনোত্তর সহিংসতা ও স্থগিত ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে দেশব্যাপী পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবির বিশেষ অভিযান শিগগিরই নতুনভাবে শুরু হবে।

No comments

Powered by Blogger.