সহিংসতা ছাড়ূন না হলে শাস্তি

(বিরোধী দলকে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি) সহিংসতা বন্ধ না করলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে বিরোধী দলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ভোটারদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না করলে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, 'আপনি নির্বাচনে অংশ নেননি ভালো কথা, কিন্তু আপনাকে সংখ্যালঘু ও সাধারণ ভোটারদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। আর তা বন্ধ না হলে কঠোর ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে।'
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানান, এসব ঘৃণ্য কাজে যারা জড়িত, তাদের ধরতে যৌথ বাহিনী দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করেছে। তাদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আলোচনার দরজা এখনও খোলা আছে। আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা আমরা জানি। কিন্তু এ জন্য আপনাকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়তে হবে।'
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী নির্বাচন ঠেকাতে চেয়ে পারেননি। তার (খালেদা জিয়া) ভুল সিদ্ধান্ত ও আহ্বানে জনগণ সাড়া দেয়নি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগণ ভোট দিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো শুরু করেছে ১৮ দলীয় জোট। কেন ভোট দিল_ এ অপরাধে যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি নেত্রীর চরিত্র বদলায়নি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর নাশকতা চালানোর মানে হলো মানুষ শান্তিতে থাকুক, এটা ওনার পছন্দ নয়।' তিনি বলেন, ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু অনেক গণমাধ্যমে এ খবর ভালোভাবে আসেনি। অথচ অনেক উন্নত দেশেও এত ভোট পড়ে না।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা। সুষ্ঠুভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তারা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ ভোট দিয়েছে। এখন দায়িত্ব হবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা করা। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে এ দেশকে গড়ে তোলা হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া হবে মূল লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সরকার বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। আর উনি স্কুলে আগুন দিচ্ছেন, বই পোড়াচ্ছেন। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করুক, এটা ওনার ভালো লাগে না।' বাচ্চাদের পড়ার পথ বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কিসের হরতাল-অবরোধ? নতুন বছর শুরু হয়েছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শুরু করতে হবে। বিএনপি নেত্রীর কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, এ-লেভেল এবং ও-লেভেলের পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি দেখা করেননি। এ পরীক্ষা বাতিল হলে শিক্ষার্থীদের অনেক বড় ক্ষতি হবে। তাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনের উদ্দেশে বলেন, 'ওনার দেওয়ার কিছু নেই। ক্ষমতায় থাকাকালীন শুধু নিয়েছেন। আর এখন দিচ্ছেন কেবলই কষ্ট।' তিনি বলেন, 'বিএনপির ব্যবসায়ীরা কি তাদের নিজেদের ক্ষতিও বোঝেন না?'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গভীর রাতে পাঁচতারকা হোটেলে বাংলাদেশের সর্বনাশ করার মিটিং হয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসসহ ১৪ দলের নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ূয়াসহ শরীফ নূরুল আম্বিয়া, ফজলে হোসেন বাদশা, এস কে সিকদার, নুরুর রহমান সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.