তুরস্কে ৩৫০ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

দুর্নীতি তদন্ত নিয়ে এরদোয়ান সরকারে অস্থিরতা
তুরস্ক সরকার একসঙ্গে ৩৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে। তাঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিন বিভাগীয় প্রধানও রয়েছেন। সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তের জের ধরে এই বরখাস্তের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ এই ঘটনায় ক্ষমতাসীন এ কে পার্টির মধ্যে বিভক্তি আরও সুস্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বরখাস্ত হওয়া ৩৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তাই রাজধানী আঙ্কারায় দায়িত্বরত ছিলেন।
যাঁদের এসব পুলিশ কর্মকর্তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই আঙ্কারার বাইরের। গত মাসে তুরস্কের পুলিশ দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত শুরু করে। ওই তদন্তকালে পরিচালিত অভিযানে সরকারের তিনজন মন্ত্রীর ছেলেকে আটক করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত পুলিশের শত শত সদস্যকে বরখাস্ত অথবা বদলি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান পুলিশ ও বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে ‘নোংরা ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ করে আসছেন। সরকারি কাজের দরপত্রে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ ওই গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছিল। গত ১৭ ডিসেম্বরের ওই অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা ছিলেন। গত সোমবার মধ্যরাতে জারি করা এক সরকারি আদেশের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের বরখাস্ত ও বদলির সর্বশেষ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে আর্থিক অপরাধ বিভাগ, মাদকবিরোধী বিভাগ ও সংগঠিত অপরাধ বিভাগের তিন প্রধানও রয়েছেন বলে স্থানীয় দোয়ান নিউজ এজেন্সির খবরে জানানো হয়েছে। উচ্চমাত্রার দুর্নীতির তদন্ত রুখতে এরদোয়ান সরকার বর্তমানে যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তার অংশ হিসেবে সর্বশেষ এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো বলেই মনে করা হচ্ছে।
এরদোয়ানের ১১ বছরের শাসনামলে এই তদন্ত সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনা তুরস্কের ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী দল এ কে পার্টির মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট করেছে বলে অনেকে মনে করছেন। এই বিভক্তির এক পক্ষে রয়েছেন এরদোয়ানের সমর্থকেরা এবং অন্য পক্ষে প্রভাবশালী ইসলামি নেতা ফেথুল্লাহ গুলেনের সমর্থকেরা। গুলেন বর্তমানে স্বেচ্ছানির্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তবে তাঁর হিজমাত আন্দোলনের সদস্যরা তুরস্কের পুলিশ ও বিচার বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। গুলেনের ইন্ধনেই ওই দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয় বলে অনেকে মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করছেন, বিদেশি মদদপুষ্ট হয়ে তাঁর সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ওই তদন্ত করা হয়। তিনি বলেন, এই ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ তিনি বরদাশত করবেন না। রাষ্ট্রের মধ্যে আরেক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এরদেয়ান দেশজুড়ে পুলিশের শত শত সদস্যকে বরখাস্তের মাধ্যমে ওই ‘ষড়যন্ত্রের’ জবাব দিচ্ছেন। গুলেন ১৯৯৯ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বসবাস করছেন। ২০০২ সালে এ কে পার্টি যখন প্রথম তুরস্কের ক্ষমতায় আসে, তখন তাঁর অনুসারীরা ছিলেন দলটির গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক। গুলেন বিতর্কিত ওই তদন্তের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন। এএফপি ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.